শাহ জামাল শিশির, ঝিকরগাছা: জামিনে মুক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন দেয়ার অভিযোগ তুলেছে বাদীপক্ষ। ঘটনাটি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সাদিপুর গ্রামে ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কলাগাছ কাটার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিতা—পুত্রকে কুপিয়ে জখম করে সোনাকুড় শেখপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে আটক করে শনিবার আসামিদের জেলহাজতে প্রেরণ করে। কিন্তু ওই দিনই জামিন নিয়ে বাড়ি চলে আসেন তারা। বাড়ি ফিরে রোববার রাতে ওই আসামিরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় পুলিশ আবারও দুই জনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুর পাড়ে লাগানো কলাগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সোনাকুড় শেখপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ ও সাদিপুর গ্রামের অর্জুন মন্ডলের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় আব্দুস সামাদ, তার স্ত্রী ও দুই পুত্র জোরপূর্বক কলাগাছ কাটা শুরু করে। অর্জুন মন্ডল তাদের কলাগাছ কাটায় বাধা দিতে গেলে আব্দুস সামাদের বড় ছেলে আলাউদ্দীন গাছি দা দিয়ে অর্জুন মন্ডলের মাথার কোপ দেয়। গাছি দার কোপে সে পানিতে পড়ে গেলে অর্জুন মন্ডলের ছেলে অপূর্ব মন্ডল, ভাই নকুল মন্ডল ও স্ত্রী লিপিকা মন্ডল ছুটে আসলে আব্দুস সামাদসহ তার স্ত্রী ও দুই ছেলে তাদেরকে মারপিট শুরু করে। এ সময় অপূর্ব মন্ডলকেও গাছি দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
এ ঘটনায় শুক্রবার ঝিকরগাছা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অর্জুনের ভাই নকুল মন্ডল। অভিযোগের ভিত্তিতে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ আব্দুস সামাদ, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম, দুই ছেলে আলাউদ্দীন ও সালাউদ্দীনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। কিন্তু ওই দিনই তারা জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে এবং রোববার রাতে আসামিরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাদীপক্ষ।
সাদিপুর গ্রামের অমিত কুমার মন্ডল জানায়, রোববার রাত ৮ টার দিকে আমরা মহল্লাবাসী অর্জুন মন্ডলের সাহায্যের জন্য আলোচনায় বসেছিলাম। আলোচনার মধ্যে শংকর কুমারের স্ত্রী দেঁৗড়ে এসে জানায় অর্জুনের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। সকলে গিয়ে পানি দিয়ে আগুন নেভাই। তবে বড় আকারের কোনো ক্ষতি হয়নি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরে বাঁকড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও শিত্তরদাহ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ গিয়ে আব্দুস সামাদের দুই ছেলে আলাউদ্দীন ও সালাউদ্দীনকে আটক করে। এব্যাপারে ঝিকরগাছা থানায় আরো একটি মামলা হয়েছে।
অর্জুন মন্ডলের আহত ছেলে অপূর্ব মন্ডল মোবাইল ফোনে জানান, কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন অর্জৃুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অর্জুন মন্ডলের স্ত্রী লিপিকা মন্ডল জানান, আমরা খুবই নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমার স্বামী সন্তান কেউ আমার পাশে নেই। বাড়িতে আমি ও আমার মেয়ে ছোট বাচ্চা নিয়ে থাকি। আমার স্বামীর এখনও জ্ঞান ফিরিনি। আমাদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। তারপরও পুলিশ আসামী ধরছে কিন্তু দিনের দিন তারা জামিন নিয়ে বাড়ি আসছে। এসে আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। গাছি দা নিয়ে পুকুরপাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শিত্তরদাহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই দেবব্রত ঘোষ জানান, আসামিদের জামিন দেয়ার এখতিয়ার আদালতের। তবে পুলিশ এ ঘটনায় কঠোর অবস্থানে আছে। প্রথম ঘটনায় ৪ জনকে দ্রুত গ্রেফতার করে এবং রোববার রাতে বাড়ি আগুন দেয়ার ঘটনায় দুজনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তদন্তপূর্বক আদালতে রিপোর্ট প্রেরণ করা হবে।