স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি খাতকে উন্নত করে চলেছে সরকারের নানাবিধ কার্যক্রম। তার হাওয়া লাগছে চিকিৎসা খাতেও। শিগগির চালু হচ্ছে স্বাস্থ্য কার্ড। ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে এই কার্ড। আগামী জানুয়ারি থেকে এর পাইলটিং কার্যক্রম শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাঁচ বছরের মধ্যে ছয় কোটি মানুষের কাছে এই স্বাস্থ্য কার্ড পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য কার্ডে থাকা নম্বরে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে লগইন করলেই রোগীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব তথ্য দেখতে পাওয়া যাবে।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো তাদের নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য কার্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। যাতে একজন রোগী হঠাৎ কোনো অসুস্থতার সম্মুখীন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার কার্ডের মাধ্যমে ডাক্তার সহজেই তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। ফলে, চিকিৎসকের সেবা দেওয়া অনেক সহজ হয়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে আমরা যথেষ্ট এগিয়ে আছি। সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে।
মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি অধিদপ্তর যথাক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নার্সিং সেবা পরিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো উলে¬খযোগ্য কাজ করে যাচ্ছে। এদের কার্যক্রম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও সুবিধা পাচ্ছে। সরকারের গৃহীত এবং বাস্তবায়িত টিকাদান কর্মসূচি এতটাই কার্যকরী হয়েছে, যার ফলস্বরূপ দেশে সংক্রমণ ব্যাধিগুলোর বিস্তার কমে এসেছে। মা এবং শিশুকে সময়মতো টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার ফলে মাতৃ এবং শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমেছে। অর্জন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধি দেওয়া হয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রের এসব উন্নতি দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি করেছে। ২০০৫—২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৫ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু ৭১.৮ বছর। তবে এই খাতকে আরও সমৃদ্ধ করার পথে রয়েছে কিছু অন্তরায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্নীতি। বর্তমান সময়ে জলবায়ুও একটি প্রত্যক্ষ কারণে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু শুধু আমাদের দেশের নয়, এর ফলে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ : সাপ¬াই চেন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে কপ—২৮ সম্মেলনে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও জলবায়ু বান্ধব হওয়া কাম্য। সরকারের অবশ্যই বিষয়টি আমলে নেওয়া এবং সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানের গৃহীত পরিকল্পনা যেন সময়মতো বাস্তবায়ন হয় এবং সর্বস্তরের মানুষ যেন এর সুফল পায়, সেই লক্ষ্যেই গুরুত্বের সঙ্গে অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয়।