নিজস্ব প্রতিবেদক : বাঘারপাড়ার খলসি গ্রামের এনায়েত আলী শেখ (৮০) বলেন, ‘ভিক্কে কইরে খাই। পরের বাড়ি থাহি। এহন জমিসহ পাকা বাড়ি দেচে শেখ হাসিনা। শেষ বয়েসে নিজির বাড়ি থাকতি পারবো। খুবই খুশি হইছি।’ কথাগুলো বলছিলেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া এনায়েত আলী শেখ (৮০)
একই গ্রামের রিজিয়া খাতুন বলেন, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে চার জনের সংসার। নতুন ঘর, জমি পেয়েছি। নতুন পাকা বাড়িতে থাকতে পারবো। খুবই খুশি।
বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া মনি ছটু (৭৮) বলেন, ‘বাপ জমি ফাঁকি দিয়ে ভাইদের নামে লিখে দিয়েছে। স্বামীর জমি নেই। পরের জায়গায় থাকতাম। শেখ হাসিনা জমি দিয়েছে। সেই জমিতে বাড়ি করে দিয়েছে। এই বাড়িতে খুবই সুখে আছি।’
শুধু এনায়েত আলী, মনি ছটু নয় তার মত ভূমিহীন যশোরের ৮ উপজেলার ২ হাজার ৯৪ জন দুই শতক জমিসহ বাড়ি পেয়ে বেজায় খুশি। এরমধ্যে সর্বশেষ চতুর্থধাপে বুধবার ৩৩৩ জনের জমিসহ বাড়ি হস্তান্তর করা হবে। এই বাড়ি ও জমির দলিল হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা হচ্ছে যশোরের ৩টি উপজেলা।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, যশোরে এক হাজার ৭৬১টি বাড়ি উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে ভূমিহীন ও অসহায়দের মাঝে। বুধবার ( ২২ মার্চ) এই প্রকল্পের চতুর্থধাপে জেলায় ৩৩৩টি পরিবারের মাঝে ভূমিসহ ঘর দেওয়া হবে। এর মধ্যে কেশবপুরে ৪৫টি ঘর, শার্শায় ৪৬টি ও বাঘারপাড়ায় ৪৯টি জমিসহ ঘর দেওয়া হবে। এই ১৪০টি পরিবারে ঘর দেওয়ার মধ্যে দিয়ে তিনটি উপজেলা শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যশোরের এই তিনটি উপজেলা শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করবেন।
বাকী ১৯৩টি ঘর বাকী ৫ উপজেলার ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উদ্যোগে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ২ শতক জমির মালিকানাসহ টিনশেড পাকা ঘর পাচ্ছেন।
বাঘারপাড়ার দোহাকুলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মোতালেব তরফদার জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতক জমির মালিকানার সঙ্গে এই বাড়িতে থাকছে দুটি করে শোয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি শৌচাগার, বারান্দা, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির জন্য নলকূপ। প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, বিধবা, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীসহ অনেক গৃহহীন আছেন যারা এই ঘরগুলো পেয়েছেন। এটি আনন্দের বিষয়। আশ্রয়ণের ঘরে বসবাসের জন্য সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাঘারপাড়া উপজেলা র্নিবাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, আমরা চার দফায় আড়াই হাজার আবেদন পেয়েছিলাম। সেগুলো যাচাই করেই প্রকৃত ১৩৮জন ভূমিহীনকে নির্বাচন করেছি। তাদেরকে দুই শতক করে জমিসহ বাড়ি প্রদান করা হয়েছে। এজন্য আমাদের উপজেলা শতভাগ ভূমিহীনমুক্ত হলো। তারা জমিসহ বাড়ি পেয়ে খুবি খুশি। সকলের সহযোগিতায় এই কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনতা থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ মার্চ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঘর ও জমি হস্তান্তর করবেন উপকারভোগীদের মধ্যে। এর মধ্য দিয়ে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীনতা মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। উপকারভোগীরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।