ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারপিট
নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন বিপ্লব হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি যথা সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করেনি। তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী হোস্টেল সুপার ডাক্তার ফয়সাল কাদির শাওনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে পূর্ব নির্ধারতি ৭ ফেব্রæয়ারি রিপোর্ট জমা হয়নি বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে এক সপ্তাহ পার হলেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। ফলে হামলাকারীদের ভয়ে জীবনাশঙ্কায় ভুগছেন জাকির হোসেন।
তবে গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি আহত চিকিৎসকের কাছ থেকে ঘটনার লিখিত বিবরণ নিয়েছেন।
তদন্তকাজে গাফিলাতি থাকলে প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাক্তার মহিদুর রহমান।
গত ৩১ জানুয়ারি হোস্টেলে মাদক সেবনের বিষয়কে কেন্দ্র করে জাকির হোসেন বিপ্লব নামে ইন্টার্ন চিকিৎসকের হাতপা ভেঙ্গে দেয় মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
যশোর মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে অবস্থানকারীদের আচরণে হতবাক যশোরবাসী। মেধাবী ও সম্ভাবনাময় যুবকদের মাদক সেবন, সন্ত্রাসী কর্মকাÐে জড়িত থাকা ঘটনা কোনভাবেই মানতে পারছে না সচেতন অভিভাবকরা। যাদের কাছে প্রেরণাদায়ী আচরণ প্রত্যাশা করা হয় তাদের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাÐ নতুন প্রজন্মকে ভুল শিক্ষা দিচ্ছে। সমাজ বিরোধী এসব কর্মকাÐে যারা মদদ দিচ্ছে তাদেরও কাÐজ্ঞান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এক ইন্টার্নচিকিৎসককে মারপিটের পর বেরিয়ে আসছে মেডিকেল হোস্টেলের অন্ধকার রূপ। দীর্ঘদিন ধরে ওই হোস্টেলে চলছে মাদক ও জুয়ার আড্ডা। জিম্মি করে রাখা হয় নতুন শিক্ষার্থীদের। কারণে অকারণে চলে মারপিটের মত অহরহ ঘটনা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কতিপয় শিক্ষকও এ কাজে সমর্থন জুগিয়েছে আসছে বলে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে।
গত ৩১ জানুয়ারি জাকির হোসেন নামে ইন্টার্ন চিকিৎসকের হাতপা ভেঙ্গে দেয় মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। ফলে সন্ত্রাসী কর্মকাÐের পিছনে কারা জড়িত এবং কেন এই হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে তা নিয়ে এখন নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে।
ভুক্তভোগী জাকির হোসেন বিপ্লব রংপুরের কাইনয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত সুরুজ্জামানের ছেলে। তিনি যশোর মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করছেন। কলেজের হোস্টেলে ১০৫ নম্বর কক্ষে তিনি থাকেন। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসক শামীম হোসেন, আব্দুর রহমান আকাশ, মেহেদী হাসান লিয়ন, শাকিব আহম্মেদ তানিম, তন্ময় সরকার ও সৌম্য সাহাসহ আরো ৩/৪জনে ১০৪ নম্বর কক্ষে প্রতিদিন গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক ও জুয়ার আড্ডা বসান। ওই আসরে চিৎকার চেচামেচি হওয়ায় ১০৫ নম্বর কক্ষে থাকা মেডিকেল শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বিপ্লব তাদের নিষেধ করেন। এতে তার উপর চরমভাবে ক্ষীপ্ত হয় তারা। পাশাপাশি জাকির হোসেনকে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে গত ৩১ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে জাকির হোসেনের ১০৫ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে তারা। এসময় তাদের কাছে হকিস্টিক, লোহার রড, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন ধরণের দেশিয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। প্রথমেই তারা জাকির হোসেনের ব্যবহৃত জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি দিতে বলে। না দেয়ায় জাকির হোসেনকে মারপিট শুরু করে। মারপিটে তার হাত-পা ও বুকের হাড় ভেঙ্গে গেছে। এ সময় তার কক্ষে থাকা টাকা ও মোটরসাইকেলটি জোর করে নিয়ে নেয়। অন্য ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর জাকির হোসেনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ওই চারজনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু আজও পর্যন্ত এই ব্যাপারে থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
অপরদিকে এই ঘটনায় মেডিকেল কলেজ একটি তদন্ত গঠন করেছে। গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সদস্য ও সহকারী হোস্টেল সুপার ডাক্তার ফয়সাল কাদির শাওন রিপোর্ট প্রদানের আগেই বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে মিডিয়াতে প্রকাশ হয়েছে। তিনি বলেছেন সন্ত্রাসী হামলার শিকার জাকির হোসেন বিপ্লব অসামাজিক লোকজনের সাথে চলাফেরা করা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া জাকির হোসেন এর আগে পাবনা মেডিকেল কলেজ থেকেও বহিস্কার হয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন ডাক্তার ফয়সাল কাদির শাওন। এছাড়া জাকির হোসেন যশোর মেডিকেল কলেজেও ইন্টার্ন কোর্সে কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়নি। ফলে ওই কমিটি কতটুকু নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন তা নিয়ে এখন সংশয় সৃষ্টি রয়েছে।
অবশ্য ডাক্তার ফয়সাল কাদির শাওন জানিয়েছেন, তিনি কোন বিরূপ মন্তব্য করেননি। হামলাকারীদের সাথে তার সখ্যতা আছে এমন প্রচারণাও মিথ্যা বলে জানান তিনি।
এদিকে জাকির হোসেনের উপর হামলাকারীরা এখনো বীরদর্পে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসেই রয়েছে। তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসীরা দ্বারা জাকিরকে এবার হত্যা করা হবে বলেও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী জাকির হোসেন বলেছেন, ঘটনার প্রায় সপ্তাহ হলেও থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তার মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়নি।
এই ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ভুক্তভোগী জাকির হোসেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান নূর কুতুবুল আলমের মুঠো ফোনে একাধিকবার রিং করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেছেন, তদন্ত কমিটি এখনো কোন জখমী সনদের জন্য আবেদন করেনি।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার মো: মহিদুর রহমান বলেছেন, এখনো প্রতিবেদন হাতে পাইনি। তবে কমিটিতে থাকা এক সদস্যের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী জাকির হোসেনের অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে তদন্ত সঠিক না হলে রিপোর্টের গ্রহনযোগ্যতা হারাবে।