সাইফুল ইসলাম : এইচএসির পর সংসার জীবনে পা রাখেন মাকসুদা হক। লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বিয়ের পরে আর হয়ে ওঠেনি। মাত্র চার বছর পরে ভাঙ্গে তার সংসার।
শিশু মেয়েকে নিয়ে ছাড়ে স্বামীর ঘর। অভাব অনাটন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ছোটখাটো বহু কাজ করেছেন তিনি।আএকপর্যায়ে এক বান্ধবীর সাহায্যে যশোরের ধর্মতলা মোড়ে গড়ে তোলেন কসমেটিক্স দোকান ও বিকাশের ব্যবসা। আর তার সেই ছোট শিশু এখন কলেজ স্টুডেন্ট।
মাকসুদা হকের মত অনেক নারী অšত্মপুর থেকে বের হয়ে নেমেছেন ব্যবসায়। অনলাইনের বদৌলতে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। প্রকাশ্যে ব্যবসায় নেমেছেন এমন নারীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। পাড়ামহলস্নায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাপড়, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের নারী ব্যবসায়ী।
শহরে চা বিক্রি করেন এমন নারী আছেন অšত্মত জনা বিশেক। পৌর এলাকার বারান্দীপাড়া বৌবাজার, সিটি কলেজ বৌবাজার ও ধানপট্টি বৌবাজারে ক্রেতা- বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ নারী।
বড়বাজার হিসেবে পরিচিত এইচ এম এম রোডেও নারীরা ব্যবসা শুরম্ন করেছেন। ব্যবসার ধারা বদলে বড়বাজারে মুদি দোকান দিয়েছেন এক নারী। অধিকাংশ নারী ব্যবসায়ী জানিয়েছেন সামাজিক সমস্যা কাটিয়ে তারা সফল হয়েছেন। অনেকেই ব্যবসার প্রসার বাড়াচ্ছেন।
৮ বছর ধরে ধর্মতলায় ব্যবসা পরিচালনাকারী মাকসুদা হক জানান, ‘বিয়ের ২ বছর পর এক মেয়ে হয়। মেয়ের বয়স যখন এক বছর আট মাস তখন মেয়ের বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
তখন আমি গ্রামীণফোনে চাকরি করতাম। এরপর আমার চাকরিটা চলে যায়। কোনো উপায় না পেয়ে ২০১৪ সালের শেষে ধার করা টাকায় থ্রি-পিসের ব্যবসা শুরম্ন করি। কিন্তু সে ব্যবসায় সফল হয়নি।
২০১৭ সালে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ২ লাখ টাকা লোন নিয়ে শুরু করি কসমেটিক্স ও বিকাশের ব্যবসা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, সমাজের এক শ্রেণির মানুষ আমার দোকানের মেয়াদ দিয়েছিলো ছয়মাস। তারপর যখন দেখলো আমি দুই বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছি তখন তাদের কথা বন্ধ হয়েছে। তিনি আরও বলেন ‘এই ধর্মতলা মোড়ে যদি ৫ জন সফল ব্যবসায়ী থাকে তাহলে আমি একজন।’
বড় বাজারের মুদি দোকানি লাকী আক্তার বলেন, ‘আগে দোকানে লোক রেখে চালাতাম। কিন্তু যাকেই রাখি সে চুরি করে। তাই নিজেই ব্যবসা করছি। যা লাভ হয় নিজেদের চলে। চলছে খারাপ না।
তিনি আরও বলেন, ‘এই দোকান দিয়ে কত মানুষের কত কথা শুনতে হয়েছে। কেউ তো সামনে বলে না সবাই পেছনে বলে মেয়েরা ঘরে থাকবে তারা কেনো বাইরে এসে ব্যবসা করবে। তারপরও কাজ করে যাচ্ছি যতদিন পারা যায় করবো।’
আর এক উদ্যোক্তা সুলতানা খাতুন বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় তেমন পড়াশুনা করতে পারিনি। সবসময় ভাবতাম কিছু একটা করতে হবে। আমার ইচ্ছা ছিলো থ্রি-পিসের ব্যবসা করবো। তারপর আর হয়ে উঠেনি। এরপর মুদি দোকান নিয়ে বসি। এই দোকান আগে আমার স্বামী চালাতো।
শুধু দোকান থেকে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়, তাই দোকান আমি চালাই আর আমার স্বামী পরে একটা চাকরি নিয়েছে। তারপরও ৫ জনের সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে যায়। এখন আপাতত এই দোকান চালাবো। যদিও নারী হয়ে এই দোকান চালানোর কারণে আশেপাশের মানুষ নানান কথা বলে।’