১৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ছাদ বাগান থেকে তনিমার ইনকাম লাখ টাকা

নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল জেলার ছাদ বাগান মালিকদের মডেল তনিমা আফরিন। শখের বসে ছাদ বাগান করলেও এখন বাগান থেকে পরিবারের ফল—সবজির চাহিদা মেটাচ্ছে। পাশাপাশি গাছের চারা বিক্রি করে বছরে আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা। স্কুলজীবনে বিয়ে করা তনিমা আফরিনের (৪২) এইচএসসি পাস করে কলেজে ভর্তির পর আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। সাংসারিক জীবনে অধিকাংশ সময়ই কেটেছে স্বামীর কর্মস্থলে। স্বামী নাজমুল হক সেনাবাহিনীতে ছিলেন।

বছর তিনেক পূর্বে অবসরে গেছেন। স্বামীর বিভিন্ন জায়গার কর্মস্থলে তনিমা গড়ে তুলেছিলেন বেলকোনি বাগান। বর্তমানে নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির ছাদ বাগান। নড়াইলের সব থেকে ভালো মানের ছাদ বাগানের মালিক এ গৃহিনী। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ শখের বাগান থেকে প্রতিবছর ইনকাম করছেন লক্ষাধিক টাকা। শখ থেকেই মূলত সেই বাগান করা শুরু। সেখান থেকে নেশা। আর এখন পেশা। বাগান থেকে আয় করতে হবে, পুরস্কার পেতে হবে এ চিন্তা কখনওই মাথায় ছিল না। অথচ অল্প সময়ে মিলেছে জাতীয় পুরস্কার। এ বাগান মালিক তনিমাকে দেখে নড়াইল শহরে গড়ে উঠেছে ছোট বড় শতাধিক ছাদ বাগান। তনিমা ইতোমধ্যে নড়াইলের ছাদ বাগান মালিকদের মডেল হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের খেলার মাঠের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে চারতলা ভবন। এ বাড়িটি তনিমা আফরিনের। তিনতলায় স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া এ বাগান মালিক তনিমা। এ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। গত বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন তনিমা আফরিন। কৃষিতে নারীর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওই দিন ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ পুরস্কার বিতরণীতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন : রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্তির দাবি
তনিমার মা তহমিনা হুসাইন ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। শিশুকাল থেকে মাকে দেখেছেন নানা ফল ও ফুলের গাছ লাগিয়েছেন বাড়িতে। অফিস থেকে এসে পরিচর্যা করতেন। ওই সময় তার (তনিমার মা) কাছে অনেকে এসেছেন আবাদের পরামর্শ নিতে। এ পরিবেশে বড় হয়ে ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তার। নড়াইল শহরে বাড়ি করার পর ২০১৬ সালে নিজ বাড়িতে চলে আসেন তনিমা। স্বামীর কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসার সময়ে ৩৮টি টবে করে গাছ নিয়ে এসেছিলেন। সেই টব দিয়ে তখন থেকে শুরু করেন ছাদে বাগান করা। অল্প অল্প করে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির এ বাগান।

দেশের নানা জায়গা থেকে জোগাড় করেছেন হরেকরকম ফুলগাছ। তার ছাদে গোলাপই আছে ৪৫ প্রকার। ২০ প্রকার জবা ফুল, ৮ প্রকার কাঁটগোলাপ, ৫ প্রকার শাপলা, ১০ প্রকার রেইন লিলি। আছে ২৫ প্রকার অর্কিড। এ ছাড়া সারি সারি শোভা পাচ্ছে অ্যাডেনিয়াম, রঙন, বেলি, মাধবীলতা, পানচাটিয়া, হাসনা হেনা, নন্দিনী, মালঞ্চ, পদ্ম, কাঁটামুকুট, জার্বেরা, রজনীগন্ধা, গাদা, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, গজানিয়া, পেঞ্জি, ক্যালুন্ডেলা, ভারবেরা ও স্কটসহ আরও দেশি—বিদেশী হরেক প্রজাতির নানা ফুলগাছ।

ফলগাছেও ভরপুর তার ছাদ। আছে বারোমাসী ও মৌসুমী ফল। একই ফলের আছে টক ও মিষ্টি প্রজাতি এবং নানা রঙের। আছে আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, কমলা, কদবেল, ছফেদা, রয়েল, জামরুল, বাতাবি লেবু, কাগুজে লেবু, বেদানা, আম, তেতুল, ড্রাগন, কলা, লিচু, লংগন, পিসফল, আমড়া, পেয়ারা, শরুফল, কাউফল ও আখসহ আরও ফল। সজিনা, পুঁইশাক, বেগুন, উচ্ছে, কলমিশাক, সবুজশাক, লালশাক, ডাটা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, সিম, লাউ, কুমড়া, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, শালগম, মুলা, পেঁয়াজ ও মরিচসহ নানা সবজির আবাদ করেছেন ছাদে।

নিম, তুলসি, ননীফল ও অ্যালোভেরার মতো ওষুধী গাছও আছে। আছে ঘর ও বেলকনি সাজানোর মানিপ্লান্ট, কপ্লান্ট, পাতাবাহর, বেবিটিয়ারস, কইলাস ও স্পাইডারপ্লান্ট। চায়না বটগাছ, দেশি বটগাছ, পাকড় ও জেডপ্লান্টের মতো বনসাই গাছ শোভা পাচ্ছে তার ছাদে।

ছাদ বাগানের মালিক তনিমা আফরিন বলেন, শুরুতে যখন সংসার খরচের টাকা দিতেন স্বামী। সেখান থেকে বাচাতাম। পাঁচ কেজি মাংসের জায়গায় দুই কেজি কিনেছি। ন্যূনতম দামের প্রয়োজনীয় কাপড় ছাড়া কাপড় কিনিনি। এভাবে সংসার খরচ থেকে বাচিয়ে গড়ে তোলা শখের এ বাগান। গত তিন বছর হলো চারা তৈরি করে বিক্রি করছি। এতে খরচ ওঠে, সংসার চলে। এছাড়া সংসারের প্রয়োজনীয় সবজি ও ফল তেমনটি কেনা লাগে না, বাগান থেকে উৎপাদন হয়। প্রতিবেশি ও আত্মীয়—স্বজনদের সবজি ও ফল দেই। আবার গাছের চারা বিক্রি করে বছরে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় হয়।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রোকোনুজ্জামান বলেন, তনিমা আফরিন একজন গৃহিনী হয়েও তার একক প্রচেষ্টায় দেশি—বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও নানা জাতের গাছ সংগ্রহ করেছেন। তা পরিচর্যা করে সফল হয়েছেন। ছাদে এত ধরনের ফসল আবাদ করা যায় তার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তনিমা আফরিন। দিনদিন জেলায় ছাদ বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram