২রা ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
‘চৌগাছার গৃহবধূ লায়লাকে কীটনাশক পানে বাধ্য করা হয়’
‘চৌগাছার গৃহবধূ লায়লাকে কীটনাশক পানে বাধ্য করা হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক : মারপিটের পর কীটনাশক পানে করতে বাধ্য করা হয়েছিল চৌগাছার গৃহবধূ লায়লাতুন জান্নাতকে(৩৫)। দুই বছরের তদন্ত শেষে সিআইডি এমনই তথ্য জানিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম এই মামলায় জান্নাতের স্বামী এনামুল কবীর ইসমাইল ও তার ভাই, পিতা-মাতাসহ ৫জনকে অভিযুক্ত করে যশোর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।


২০২১ সালের ৩০এপ্রিল চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে নিহতের স্বামী এনামুল কবীর ইসমাইলের বাড়িতে লায়লাতুন জান্নাতের মৃত্যু হয়।

মৃত লায়লা নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার অ্যাডভোকেট শেখ থায়েব আলী আসাদের একমাত্র মেয়ে।
অভিযুক্তরা হলেন, চৌগাছা উপজেলার তিলকপুর গ্রামের একছের আলী মন্ডল, তার স্ত্রী জুলেখা বেগম, তিন ছেলে এনামুল কবীর ইসমাইল, হাচান আলী ও তানভীর আহম্মেদ বকুল।
এই মামলা থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে, এনামুল কবীর ইসমাইলের বোন তারা বেগম ও তার ভাই বকুল মন্ডলের স্ত্রী মণি বেগমকে।

মামলার বিবরণে উল্লেখ রয়েছে, ২০০৫ সালের পারিবারিকভাবে এনামুল কবীর ইসমাইলের সাথে লায়লাতুন জান্নাতের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে ইশরাক হোসেন ও ইশান হোসেন নামে দুই ছেলে রয়েছে তাদের। ২০১২ সালে ইসমাইল ঢাকার হেমায়েতপুরে জমি ক্রয় করতে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় লায়লার কাছে যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় লায়লার উপর অমানুসিক নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে লায়লাকে মারপিটের পরে তার পিতার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এই ঘটনায় লায়লার পিতা অ্যাডভোকেট শেখ তায়েব আলী আসাদ নড়াইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরই মধ্যে ওই মামলা থেকে রেহাই পেতে ইসমাইল যৌতুক ছাড়াই স্ত্রী লায়লাকে নিয়ে সংসার করবেন বলে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে মৌখিকভাবে অঙ্গীকার করেন। এরপর আবারও লায়লাকে নিয়ে সংসার করার মধ্যে জমি ক্রয়ের জন্য টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে লায়লার পিতা জামাই ইসমাইলকে নগদ দুই লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার ক্রয় করা বাবদে আরো তিন লাখসহ মোট ৫ লাখ টাকা দেন।

কিছুদিন পর আবারও দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবিতে লায়লাকে মারপিট শুরু করে। কিন্তু ওই সময় লায়লার পিতা গুরুতর অসুস্থ থাকায় ভারতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফলে টাকা না দেয়ায় অন্যত্র আরেকটি বিয়ে করে যৌতুক আদায়ের কথা বলে এক নারীর সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন ইসমাইল। ওই পরকিয়ায় বাধা দেয়ায় ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে লায়লাকে মারপিট করে। বিষয়টি মোবাইল ফোনে লায়লা তার পিতাকে জানান। ওই সময় লায়লার ছোট ছেলে মাত্র আড়াই মাস বয়স। যে কারণে মারপিটের শিকার হয়েও তিনি সেখানেই ছিলেন। পাশাপাশি এই ঘটনায় কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় আবারও পরিবারের সকলে মিয়ে লায়লাকে মারপিট করে। এরপরে তার মুখে জোর করে কীটনাশক ঢেলে ঠেলে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরই লায়লাকে তারা প্রথমে চৌগাছা উপজেলা স্বাক্ষ্য কমপ্লেক্সে, পরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকায় রেফার্ড করে চিকিৎসকেরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটে পৌছানো মাত্র লায়লা মারা যান।


কিন্তু এতকিছুর পরও বিষয়টি লায়লার পিতার পরিবারকে জানাননি ইসমাইলের পরিবার। শুধু তাই নয় লায়লা লাশ দাফনেরও চেষ্টা করে। লোক মারফত খবর পেয়ে চৌগাছা থানা থেকে পুলিশ নিয়ে লায়লার লাশ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত শেষে নড়াইলে দাফনের সময়ও ইসমাইলের পরিবার কোন খোঁজখবর নেননি।

এরপরে লায়লার ঘাতক স্বামী ও তার পরিবারের মোট সাতজনের বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় মামলা করেন তার পিতা। পুলিশ ওইদিনই লায়লার ঘাতক স্বামী ইসমাইলসহ দুইজনকে আটক করে। কয়েকমাস হাজতবাসের পর আদালতে থেকে ইসমাইলের জামিন হয়।

মামলাটি প্রথমে চৌগাছা থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন তদন্ত করেন। এসআই গিয়াস উদ্দিনের তদন্তে গাফিলাতির অভিযোগে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র এসআই রেজওয়ান তদন্তের দায়িত্ব পান। এসআই রেজওয়ান শুধুমাত্র ইসমাইলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

ওই তদন্তের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী অ্যাডভোকেট শেখ তায়েব আলী আসাদ। আদালতের নির্দেশে সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক সুব্রত পাল তদন্ত করেন। তিনিও একইরকম চার্জশীট দেন। ফলে বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মানিক চন্দ্র গাইন তদন্ত করেন। কিন্তু তার অন্যত্র বদলী হওয়ায় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম তদন্ত পান। সিরাজুল ইসলাম ওই মামলায় ৫জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলার বাদী অ্যাডভোকেট শেখ তায়েব আলী এই তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করে, তার একমাত্র মেয়ে লায়লাতুন জান্নাত হত্যার বিচার দাবি করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
Fri Sat Sun Mon Tue Wed Thu
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram