ইয়াকুব আলী, চৌগাছা (যশোর) : গত এক বছরে যশোরের চৌগাছায় বিভিন্ন সড়কে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। সড়কে দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল। মৃতের তালিকায় নারী শিশুসহ সব বয়সের মানুষ রয়েছেন। তবে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটার পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ যানবাহন ও বেপরায়া চলাচলের কারণ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেড়ছে, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি হতে ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত চৌগাছার সড়কগুলোতে প্রাণ গেছে ২০ জনের। আহত হয়ে পঙ্গুত্বে অভিশাপে ভ’গছেন শতাধিক মানুষ। এসব দুর্ঘটনার কবলে পড়া স্বজনহারা পরিবার গুলোতে আজও বোবা কান্না ও আহাজারি থমেনি।
গত বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরের দিন বুধবার বিকেলে হাজরাখানা গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে শাহিনুর রহমান শাহি (২৪) ও একই গ্রামের বাবর আলীর ছেলে সাগর হোসেন (২২) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চলে যায় না ফেরার দেশে। ফের্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে ফাঁসতলা বাজার সংলগ্ন সড়কে বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় প্রাণ যায় চৌগাছার মুদি ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদের ভাইরা ইসমাইল হোসেনের (৫৬)। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে চৌগাছা-যশোর সড়কে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেলের সাথে ইজিবাইকের ধাক্কায় সড়কে ছিটকে পড়ে মোটরসাইকেল চালক পৌর এলাকার তারনিবাস মহল্লার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জিয়ার (৪৫) মৃত্যু হয়। ২৫ মার্চ রাত ৮ টায় চৌগাছা-যশোর সড়কে কয়ারপাড়ার ইউপি ভবনের সামনে বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সড়কে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পথচারী কয়ারপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলামের (৪৫)। একই মাসের ১ তারিখে চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কে মুক্তদাহ মোড় সংলগ্ন সড়কে প্রাণ যায় কীটনাশক ব্যবসায়ী উপজেলার দেবিপুর গ্রামের চান্দু মিয়ার ছেলে বিপ্লব হোসেন ওরফে বিল্লাল (৪২)। এপ্রিলের ৪ তারিখে বেলা ১১ টার দিকে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় রাজু আহমেদ (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত রাজু উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের দানবাক্স নওদাপাড়া গ্রামের লাল্টু বিশ্বাসের ছেলে। ৭ তারিখে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে স্কুল শিক্ষার্থী টেংগুরপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে লিমন হোসেন (১৭) আহত হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ তারিখে সে মারা যায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে রাস্তায় হাঁটার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ যায় উপজেলার মন্মতপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক(৬৭)। ১৭ মার্চ সকালে চৌগাছা-যশোর সড়কে ডিভাইন গার্মেন্টেসের সামনে স্যালোচালিত আলমসাধু উল্টে চালক আছর উদ্দিন (৩৬) মারা যান। তিনি উপজেলার কাঁকুড়িয়া গ্রামের এলাহি বক্সের ছেলে। ওই মাসের ৬ তারিখে উপজেলার টেংগুরপুর মোড়ে সড়কের বিট পার হওয়ার সময় স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে রোজিনা খাতুন (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। তিনি জীবননগর উপজেলার সুবোলপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। মার্চ মাসের ২ তারিখে দুপুরে চৌগাছা-যশোর সড়কে ব্র্যাক অফিসের সামনে ট্রলির ধাক্কায় মারা যান ভ্যান চালক নজরুল ইসলাম(৫৭)। তিনি উপজেলার মাজালী গ্রামের বাসিন্দা। এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে সড়কে প্রাণ যায় ব্যবসায়ী ডালিম হোসেনের (৫৬)। তিনি উপজেলার ফুলসারা গ্রামের শিক্ষক মরহুম আমজাদ হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী উষা বেগমসহ ৪ জন মারাত্মক আহত হন। ৩ জুলাই সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে জরুরি কাজে বাড়িতে ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সড়কেই লাশ হন জাহিদ হাসান জুয়েল (৩৫)। তিনি উপজেলার মাজালী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। একই মাসের ২৪ তারিখে চৌগাছার তন্ময় ইসলাম তপু (২৭) সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সে উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের মাশিলা লক্ষিপুর গ্রামের কামাল হোসেনের একমাত্র ছেলে। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যায় কলেজ ছাত্র আরিফ হোসেন (১৮)। আগস্টের ৫ তারিখে মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। নিহত আরিফ হোসেন পৌরসভার তারনিবাস মহল্লার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানের ছেলে এবং তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের ছাত্র ছিল। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখে চৌগাছা পারবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় মহেশপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মী প্রদীপ কুমার (৪৫) মৃত্যু হয়। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মৃত রতন মল্লিকের ছেলে।
এই সব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারনো এই উপজেলার পিতা-মাতা,ভাই-বোন আত্মীয় স্বজনহারাদের বোবা কান্না থামেনি। সেই সাথে হাত ও পা হারানো আহতদের প্রতিটি পরিবারে কষ্ট আর আহাজারি গত এক বছরেও থামেনি।