২০শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
চুয়াডাঙ্গায় কেন এত তীব্র তাপপ্রবাহ
চুয়াডাঙ্গায় কেন এত তীব্র তাপপ্রবাহ ?

সমাজের কথা ডেস্ক : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গা। গত কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ জেলার উপর দিয়ে। গত তিন দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে, আর তা থাকছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারও (১৮ এপ্রিল) ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে তাপমাত্রা। যা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

 

তাপপ্রবাহের এমন অবস্থা এ জেলায় নতুন নয়। প্রতি বছর বেশ কয়েক বার ঘুরে ফিরে আসে তাপপ্রবাহ। কিন্তু এই জেলায় বা এর আশেপাশে কেন তাপমাত্রা এমন চরম ভাবাপন্ন সে প্রশ্ন অনেকের। পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থান এবং স্থানীয় জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ বেশি থাকে।

 

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

মাঝখানে কিছুদিন তাপমাত্রা কম ছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি , ১৮ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, গত ৪-৫ বছর ধরে দেখছি চুয়াডাঙ্গা ৪০ এর কাছাকাছি থাকে। গত বছর এই সময়ে জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি উপরে। সে তুলনায় সামান্য কম হলেও একই রকম তাপ অনুভব হচ্ছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশ স্বাধীনের পর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এখন পর্যন্ত এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর পরের বছরগুলোতে একাধিকবার তাপমাত্রা ৪০-এর ঘর পার করেছে।

 

জামিনুর রহমান বলেন, এ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপ অনুভব হয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। একটা অঞ্চলে যখন হিট ওয়েভ শুরু হয় তখন যদি এটা দ্রুত রিলিজ হতে না পারে তাহলে সেখানে গরম বেড়ে যায়। তাপ দ্রুত রিলিজ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, গাছপালা কমে যাওয়া, জলাধার কমে যাওয়া এসব কারণেই মূলত তাপটা রিলিজ হয় না। ফলে তাপমাত্রাটা বাড়তে থাকে।

 

এছাড়া জেলাটির ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে বিহার, কলকাতা হিট ওয়েভ চলছে। ওখানে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে এখানেও বেশি থাকে। এর কারণ ভৌগলিকভাবে চুয়াডাঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি । পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে এখানে তাপমাত্রা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর একটা হিট ওয়েভ যখন পশ্চিমবঙ্গ হয়ে প্রবেশ করে তার একটা অংশ চুয়াডাঙ্গা হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করে এটাও অন্যতম কারণ।

চুয়াডাঙ্গার এমন পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সবচেয়ে গরমের মাস। এ সময় পৃথিবী সূর্য লম্বালম্বিভাবে আমাদের দেশে কিরণ দেয়। দেশের প্রেক্ষাপটে চুয়াডাঙ্গা এখন উত্তপ্ত। কিন্তু আমাদের দেশের পশ্চিম অঞ্চল বিশেষ করে বিহার, উত্তরপ্রদেশ , মধ্যেপ্রদেশ এসব অঞ্চল উত্তপ্ত। ওখানকার তাপমাত্রা বাংলাদেশের চেয়ে একটু বেশি।

 

এ কারণে পশ্চিম দিক থেকে উত্তপ্ত লু হাওয়া (শুকনো গরম হাওয়া) বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গাও অন্যতম প্রবেশ পথ। লু হওয়া ও অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি এই দুইয়ের যুগপৎ সংমিশ্রণে আমাদের চুয়াডাঙ্গাসহ ওই অঞ্চল এপ্রিল মাসে উত্তপ্ত থাকে। একই অবস্থা থাকে মে মাসেও। এমনকি পুরো গ্রীষ্মকালজুড়ে এ এলাকা উত্তপ্ত থাকে।

 

তিনি বলেন, এ সময় এই অঞ্চলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে গরম বেশি অনুভূত হয়। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬০ শতাংশর যত বেশি হবে গরমের তীব্রতাও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এক সময় ঈশ্বরদীর আশেপাশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকতো এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পদ্মায় পানি ছিল না। এখন চুয়াডাঙ্গাতেও একই অবস্থা। এক সময় এ অঞ্চলে প্রচুর জলাভূমি ছিল।এছাড়া এর আশেপাশে হাওর-বাওর ছিল। যা তাপকে শোষণ করতে পারতো। এখন এর পরিমাণ কমে গেছে । মূলত এটাও একটা বড় কারণ তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হওয়ার ।

 

বায়ুমণ্ডল দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পাথুরে মাটিতে তাপমাত্রা দীর্ঘক্ষণ ধরে শোষণ করে থাকে। বালি মাটি হয় খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। আমাদের দেশে প্রচুর অবকাঠামো হচ্ছে। এখন অবকাঠামো যদি বেশি হয় আর সবুজায়ন যদি কম হয় আবার পানির স্থর যদি নিচে নেমে যায় তখনই আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতিও এমন। এর ফলে গরমকালে বেশি গরম থাকে শীতকালে বেশি শীত থাকে। যা মরুকরণের লক্ষণ।

 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram