খাজুরা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের খাজুরায় চিত্রা নদীর পাড় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি চক্র। শুধু তাই নয়, এই মাটি ট্রাক্টরে করে বহন করায় কালিতলা-প্রেমচারা গ্রামীণ সড়ক এখন হালচাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনকে। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই রাস্তাটি একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ভাঙনের মুখে পড়বে নদীর পাড়ের বিশাল অংশ।
অভিযোগ উঠেছে, দিনে-দুপুরে মাটি কাটা হলেও স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। বন্দবিলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়খুদড়া এলাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে এমন দৌরাত্ম্য। স্থানীয়রা জানান, একই এলাকার আজহার মোল্যার ছেলে মোতাবেল মোল্যা এই মাটি কাটা চক্রের মূলহোতা। গত দু’দিনে তিনি পার্শ্ববর্তী প্রেমচারা স্কুলপাড়া এলাকার শামছুর মন্ডলের কাছে প্রায় ৫০ গাড়ি মাটি বিক্রি করেছেন। সেই মাটি দিয়ে নিজের পুকুর ভরাট করছেন ওই ক্রেতা। ট্রাক্টর প্রতি মাটি বিক্রি করে মোতালেবের পকেটে ২০০-৩০০ টাকা এসেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দিয়ে দেখা যায়, অজিত মাস্টারের ঘাটে একটি এস্কেভেটর (ভ্যেকু মেশিন) দিয়ে নদীর পাড় ও শ্মশানের মাটি কেটে ট্রাক্টরে ভর্তি করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর সেই মাটি নিয়ে কালিতলা-প্রেমচারা কাঁচা রাস্তা দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এতে মূল রাস্তার দু’পাশের মাটি বসে লম্বালম্বি গভীর নালা তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাঁদাপানিতে রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
এ সময় এস্কেভেটর চালক মিরাজ বলেন, চুক্তি হিসেবে এক ঘন্টা মাটি কাটলে ২ হাজার টাকা পান তিনি। দু’দিনে ৬ ঘন্টা মাটি কেটেছেন। পাশেই ট্রাক্টরের ওপর বসা আব্দুল করিম নামে এক চালক বলেন, তিনিও একই চুক্তিতে পান ৪০০ টাকা। নদীর পাড়ের ওপরের জমির মালিক গৌতম সরকার বাড়ি না থাকায় কথা হয় তার বোন অর্চনা রানীর সাথে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মাটি বিক্রি করিনি। নদীর পাড়ে আমরা ধান চাষ করবো বলে লেবেল করে তারা মাটি কেটে দেবে বলে মাটি দিছি।’ এ সময় ওই বাড়ির বারান্দায় বসা মাটি কাটা চক্রের মূলহোতা মোতালেব মোল্যা এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। মাটির ক্রেতা শামছুর মন্ডল বলেন, ‘আমার কি দোষ ভাই! ৮০০ টাকা করে ট্রাক্টর প্রতি মাটি কিনেছি।’
স্থানীয় প্রেমচারা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক এসআই রবীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, খবর পেয়ে নদীতে গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। এ ব্যাপারে জানতে গতকাল বিকেলে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলামের দাপ্তরিক মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্ত তিনি কল না ধরায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।