বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে সরকারি জমির সীমানা নির্ধারনে সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই বাজারের ব্যবসায়িরা মঙ্গলবার অবৈধ পাকা ইমারাত উচ্ছেদ ও খাল পুনখননের দাবিতে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন দিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে অভিযোগকারী সোলায়মান আহম্মেদ, ইব্রাহীম বাওয়ালী, মো. জালাল বাওয়ালী, ই¯্রাফিল ও আনোয়ারসহ অনেকে বলেন, ‘গত ২৭ নভেম্বর বিকেলে কলিগঞ্জ বাজারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য সরকারি জমির সীমানা নির্ধারনে সহকারী কমিশনার (ভ‚মি), ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, চেইনম্যানসহ আরও অনেকে জনসাধারনের সম্মুখে পরিমাপ করে লাল চিহ্ন দিয়ে লাল পতাকা গেড়ে দেন। এ সময় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার পাঁকা ইমারত ও ভবন ওই লাল চিহ্নের মধ্যে পড়ে। তখন প্রশাসন লাল চিহ্নের মধ্যে পড়া অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে মৌখিক ভাবে নির্দেশ দেন। এরপর মল্লিক রেজাউল করিমসহ প্রভাবশালীরা উচ্ছেদ ঠেকাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এ ঘটনার পর গত ২ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে ওই জায়গায় পুনরায় চিতলমারী সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বেদবতী মিস্ত্রী’র উপস্থিতিতে এবং সার্ভেয়ার মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে পরিমাপ শুরু হয়। পরিমাপে বিগত দিনের সীমানা চিহ্ন প্রায় ৩০ থেকে ৩২ ফুট সরে যায়। এতে সরকারি জায়গায় অবস্থিত অবৈধ দখলদারদের ভবন গুলো রক্ষা পায়। একই সার্ভেয়ারের পরিমাপ দুইবারে দুই রকমের হয়েছে। মল্লিক রেজাউল করিমসহ প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলদারি রক্ষার্থে সার্ভেয়ার মো. আনোয়ারুল হক বিত্তশালীদের পক্ষ নিয়েছেন। আমরা পুনরায় নিরপেক্ষভাবে পরিমাপের জন্য সীমানা নির্ধারনের দাবি জানাই। আমরা চাই সরকারি জায়গা অবমুক্ত করা হোক। বহমান খাল খনন করে পানি নিস্কাশনের ব্যাবস্থা করা হোক।’
এ ব্যাপারে সন্তোষপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী মল্লিক রেজাউল করিম বলেন, ‘লাল চিহ্নের মধ্যে আমার বিআরএস রেকর্ডীয় ১৪ শতক জমি ছিল। যার দাগ নং-৮৪৭ ও ৮৪৮, খতিয়ান নং-১৮৯, মৌজা-কিসমত পিঁপড়াডাঙ্গা। কতিপয় ব্যক্তি আমার ক্ষতির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এবারের পরিমান সঠিক হয়েছে। এ মাপে আমরা খুশি।’
চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা মুজিবর রহমান শামীম বলেন, ‘মল্লিক রেজাউল করিমসহ অন্য ব্যাক্তিদের পাকা ইমারত ও ভবন গুলো খালের মধ্যে। এ গুলো অবৈধ স্থাপনা। এগুলো উচ্ছেদ প‚র্বক খাল খনন করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে। এখানে প‚র্বেও খাল ছিল। বর্তমানেও খাল বহমান। প্রভাবশালীদের ওই ভবন গুলো বাঁচাতে সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্টরা অনৈতিক ভাবে পক্ষপাতিত্ব করেছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি পুনরায় পরিমাপসহ দ্রæত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল খনন করা হোক।’
চিতলমারী উপজেলা ভ‚মি অফিসের সার্ভেয়ার (আমিন) মো. আনোয়ারুল হক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘আগের পরিমাপের সময় লাষ্ট স্টেশন ঠিক ছিল না। এবার হয়তো সরে এসেছে। এ জন্য সীমানাও সরে গেছে। এখানে আমাদের কি দোষ।’
চিতলমারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বেদবতী মিস্ত্রি জানান, সার্ভেয়ারের লিখিত প্রতিবেদন এখনো হাতে পায়নি, পেলে জানাবো।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, চিতলমারী উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে আমার বরাবরে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নদী ও খালের সীমানা নির্ধারনের জন্য পরিমাপের নির্দেশ দিয়েছি। সীমানা নির্ধারনের পরে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। অবৈধ দখলদাররা যতই প্রভাবশালী হোক নদীর ভরাট হওয়া জমির উপর কোন স্থাপনা থাকবে না।
।