সমাজের কথা ডেস্ক : দেশ থেকে সুগন্ধি চালসহ সব ধরনের চাল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কৃষি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতি শাখা থেকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাহিদার থেকে চালের উৎপাদনের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে ঘাটতি পূরণে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা—ও করা যাচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে চাল রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতি শাখা থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গত ১০ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে কৃষিপণ্য রপ্তানির সমস্যা ও সমাধানের কৌশলসংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে চাল/সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। এর পর গত ৮ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায়ও দেশের সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশ থেকে সুগন্ধি চালসহ যে কোনো প্রকার চাল রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়। এমন অবস্থায় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থাকে এসব সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২—২৩ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তিন ক্যাটাগরির (আউশ, আমন ও বোরো) চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ওই অর্থবছরে চাল উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১—২২) উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার টন।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে (গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত) সরকারি পর্যায়ে চালের মজুদের পরিমাণ হচ্ছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টন। চালের চাহিদা মেটাতে চলতি ২০২৩—২৪ অর্থবছরে ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরসহ গত তিন অর্থবছরে চালে কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে চলতি অর্থবছরে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ১৩ হাজার টন। চালের চাহিদা পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসন্ন আমন মৌসুমে ৩ লাখ টন ধান, ৫ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৯ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এগুলো সংগ্রহ করা হবে। এর আগে গত বোরো মৌসুমে ধান—চাল মিলিয়ে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার টন বোরো চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।