৯ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ
326 বার পঠিত

সমাজের কথা ডেস্ক : উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আজকাল অনেকেই একটা পূর্ণকালীন চাকরির পাশাপাশি ক্যারিয়ার সহযোগী বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করছেন বা করার পরিকল্পনা করছেন। অপরদিকে চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্যকালীন ও সাপ্তাহিক বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক কোর্স চালু করা হয়েছে। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দক্ষতার সাথে সমন্বয় করার আত্মবিশ্বাস থাকলে তাদের জন্য বিষয়টা কিছুটা হলেও সহজ হয়ে যায়। আমি নিজেও পূর্ণ সময়ের চাকরির পাশাপাশি একটি মাস্টার্স, একটি ডিপ্লোমা ও একটি এক বছরের ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছি। তবে সত্যি বলতে কি, যাত্রাটা কিন্তু সহজ ছিল না মোটেও। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা কিছুটা নির্ভর করে আপনার চাকরির ধরণ, চাকরি জন্য আপনাকে কতক্ষণ সময় দিতে হয় তার উপর। আপনি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, ঘরে সন্তান আছে কি নেই, পরিবারের কোনো চাপ আছে কি নেই, কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন এমন প্রশ্ন সামনে থাকবে। নিজের কাজ, নিজের লক্ষ্যের প্রতি একনিষ্ঠতা আর তার সাথে কিছুটা কৌশলী হলেই এই চাপটা আপনি নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

পরিকল্পনা করুন সবার আগে

একজন সুস্থ মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতের জন্য কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। এর বাইরে অফিস কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা, সাথে দুই ঘণ্টা যাওয়া ও আসা, খাওয়া—গোসল ইত্যাদি মিলিয়ে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। সবমিলিয়ে দাঁড়ায় ২০ ঘণ্টা। হাতে রইল চার ঘণ্টা। সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো সাধারণত তিন ঘণ্টার হয়ে থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা আবার সপ্তাহে তিন বা চার দিন। তাহলে বুঝতেই পারছেন, যদি সান্ধ্যকালীন কোর্স হয় তবে তিন ঘণ্টা সেই কোর্সকে বরাদ্দ দেয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং। অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি অফিসের পাশেই হয় তবে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে আপনার কোর্স যদি হয় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তবে ভিন্ন কথা। তবে সাপ্তাহিক কোর্স কিন্তু সারাদিনব্যাপী হয়। সারা সপ্তাহ অফিসের ঘানি টেনে যে দিনটায় একটু বিশ্রাম করবেন, সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়াশোনা করা একজন কর্মজীবীর জন্য কঠিনই বটে। তাই এই অসাধ্য সাধনে প্রথম যে পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল আপনার চারপাশের সামাজিকতা, বন্ধুবান্ধব, ঘোরাফেরা, আড্ডা এসব রঙিন ভুবনকে এক বা দুই বছরের জন্য বিদায় জানাতে হবে।

পরিশ্রম করুন বুদ্ধি করে

একটা কথা মনে রাখবেন, ভালো কিছু পেতে গেলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতেই হয়, কিছু ছাড় দিতেই হয়। তবে হ্যাঁ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না যেন। পড়াশোনা শুরুর প্রথম কিছুদিন বেশ উদ্যোমের সাথে অনেকেই শুরু করেন। কিছুদিন পরেই অফিস শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে বা পরিবারের সকলের সাথে বসে আড্ডা দেয়া, কোথাও বেড়াতে যাওয়া, অনলাইন বা অফলাইনে সামাজিকতা রক্ষা করা এসব মনে করে কিছুটা বিষণ্ণ বোধ করেন অনেকেই। ধরে নিন, যুদ্ধের এই পর্বটি আপনার প্রথম পরীক্ষা। এ সময় মনোবল ধরে রাখা, ধৈর্যের সাথে চাকরি, পড়াশোনা এবং পরিবারের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই এই জায়গাটাতে এসে ছিটকে পড়েন।

সুযোগ আছে অনেক

চাকরির পাশাপাশি যারা পড়তে চান তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরে দুই সেমিস্টার মেয়াদি স্কিল—বেইজড পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি) প্রোগ্রাম চালু আছে। ১২টি বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। পিজিডি প্রোগ্রামের ১২টি কোর্স হলো— ল্যাঙ্গুয়েজ (ইংরেজি, আরবি), অন্ট্রাপ্রেনারশিপ (শিল্পোদ্যোগ), ডিজিটাল মার্কেটিং, আইসিটি ইন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বিজনেস, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেল ম্যানেজমেন্ট, ক্যাপিটাল মার্কেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি), ডেটা অ্যানালাইটিক্স, ফার্মিং টেকনোলজি। ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।

পড়াশোনা করুন সমন্বয় করে

সময়ের সঠিক সমন্বয়ের জন্য একটি লিখিত রুটিন করে ফেলুন। রুটিন করে নিয়মিতভাবে কিছুটা করে পড়তে থাকুন। চেষ্টা করুন যেটুকুই পড়ছেন সেটা বুঝে পড়ছেন। পড়া বোঝার জন্য সমমনা মানুষদের নিয়ে একটি অনলাইন গ্রুপ করে নিতে পারেন। পড়াশোনা করতে গিয়ে কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে সেই গ্রুপে শেয়ার করতে পারেন। অফিস যাতায়াতের সময় যানবাহনে সুযোগ থাকলে কিছুটা পড়াশোনা করতে পারেন। ক্লাস লেকচারগুলোর রেকর্ডিং রাখতে পারেন। সেই রেকর্ডিংগুলো হেডফোনের মাধ্যমে এই যাতায়াতের সময়টুকুতে শুনতে পারেন। এরপরের চ্যালেঞ্জটুকু হলো ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট এবং প্রেজেন্টেশন। এক্ষেত্রে আগে এই ধরনের কোর্স সম্পন্ন করেছেন এমন বড় ভাই—বোনের সহযোগিতা বেশ কাজে লাগে। তারপর চলে আসে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে এক—দুই দিন ছুটি নিয়ে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মজার ব্যাপার হলো, এভাবে চলতে চলতে একদিন দেখবেন আপনি কোর্সটি শেষ করে ফেলেছেন। বিশ্বাস করুন, সার্টিফিকেট পাওয়ার পর সেই অক্লান্ত পরিশ্রমের দিনগুলির কথা, ত্যাগের কথা তেমন আর মনে থাকে না।

আসলে এই কঠিন যাত্রায় আপনার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, আর আত্মবিশ্বাস আপনার একমাত্র সহায়ক হয়ষ আমি অনেক নারীকে দেখেছি যারা কিনা সংসার, চাকরি, পড়াশুনা সবই সামলাচ্ছেন সমান তালে কোথাও কোনো ত্রুটি না রেখেষ সত্যি বলতে কি, ভালো কিছু করার অদম্য চেষ্টাই মানুষকে উন্নত করে তোলেষ

লেখক: নাদিম রেজা, থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram