নিজস্ব প্রতিবেদক : আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) আব্দুল¬াহ আল মামুন (২৪) নামে এক শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটা করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। আহত মামুন বিশ্ববিদ্যালয়েরর পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ ¯œাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ঘটনা জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত একজনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে জড়িতদের শান্তির দাবিতে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে প্রধান অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী বদিউজ্জামান বাদলকে স্থায়ী বহিস্কারের দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, ২০২০ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে যশোর-চৌগাছা সড়কের পাশে যৌথভাবে ৪ শতক জমি কেনেন আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মুজাহিদ হাসান। স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুকের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে প্রায় তিন বছর জমিটি কেনা হয়। কিন্তু এতদিনেও তারা জমিটি বুঝে পাননি। যদিও সেই জমিতে মামুন ফেন্ডস ফটোকপি নামে একটি দোকান দেন। দোকান দেওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক
বদিউজ্জামান বাদল মামুনের কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অপারকতা প্রকাশ করলে সেই ফটোকপির দোকান ও জমি জোর করে বাদল দখল করার চেষ্টা করে। মামুন বাধা দিতে গেলে বৃহস্পতিবার রাতে বাদল ও তার সঙ্গে কিছু লোকজন নিয়ে মামুনকে হাতুড়িপেটা করে পালিয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
যবিপ্রবি প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, এর আগে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সন্ত্রাসী ও বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে সাময়িক বহিস্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদলকে। সম্প্রতি তিনি স্বপদে বহাল হয়েছেন। বাদলের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ডজনখানেক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি, হত্যা মামলায় কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মামুন বলেন, দীর্ঘদিন জমি কিনলেও জমির মালিক ওমর ফারুক সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। তারপরও সেই জমিতে একটি ফটোকপি দোকান দিয়েছি। এই ফটোকপির দোকান চালিয়ে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি জানান, এই জমি দখল নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল বিভিন্ন সময় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চাাঁদা না দিলে এই জমিতে উঠতে দেবে না বলে হুমকিও দেয় বাদল। শেষমেশ কোন ব্যবস্থা করতে না পেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করলে বিচারক জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। বিষয়টি বাদল জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে তার লোকজন নিয়ে রাতে দোকান ও জমি দখল করতে যায়। তাদের বাধা দিলে বাদলের নেতৃত্বে তারা হাতুড়ি দিয়ে আমাকে মারপিট করে ফেলে রেখে যায়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক শারিউল ইসলাম বলেন, ‘মামুনকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করলেও বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাম পায়েও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, ঘটনা শুনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, এর আগে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সন্ত্রাসী ও বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে সাময়িক বহিস্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদলকে। সম্প্রতি তিনি স্বপদে বহাল হয়েছেন।
এদিকে, আব্দুল্লাহ আল মামুনের (২৯) ওপর হামলার ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে দুইজনকে। এরা হলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি সুপারভাইজার সদর উপজেরার শ্যামনগর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে বদিউজ্জামান বাদল (৪০) এবং সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিনুর রহমান সাগর (৩৫)। আহত মামলা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
নওদাগ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে মুজাহিদ হাসান (৩২) কোতয়ালি থানায় দায়েরকরা এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তিনি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ৪ শতক জমি ক্রয় করেন। কিন্তু আসামি বাদল ওই জমি ভোগদখল করতে নানাভাবে বাঁধা সৃষ্টি করছে। গত ১৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসামিদ্বয় হাতুড়ি এবং লোহার রড নিয়ে ওই জমিতে যায়। এই মামুনকে পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। সে সময় নিষেধ করলে আসামিদ্বয় তাকে বেদম মারপিট করে। হাতুড়ি দিয়ে হাত ও পায়ে আঘাত করে হাড়ভাঙ্গা জখম করে। সে সময় তার চিৎকারে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসালে আসামিদ্বয় ফের হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে মামুনকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।মামলার পর পুলিশ একজনকে আটক করেছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, মামলার পর হামলায় জড়িত অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত বদিউজ্জামান বাদল এখনও পলাতক রয়েছে। তাকে আটকের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী আবদুল¬াহ আল মামুনের ওপর হামলায় প্রধান অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদলকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিযুক্ত বদিউজ্জামান বাদল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী হলেও স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তিনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকলেও তিনি পার পেয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সাময়িক বহিস্কার করে। আবার স্বপদে ফিরে বেপরোয়া হয়ে উঠে। এবার তার স্বায়ী বহিস্কার দাবি করছি।