মিলন রহমান : ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালি। আসন্ন বসšত্ম উৎসব, ভালবাসা দিবস ও আšত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলড়্গে ফুলের বাজার ধরতে শেষ মুহূর্তের ব্য¯ত্ম সময় পার করছেন এই অঞ্চলের ফুলচাষীরা।
অনুকূল আবহাওয়া ও বাজার পরিস্থিতি ভাল হওয়ায় ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এ মাসে তাদের বেচাকেনা ৭০ কোটি টাকা পর্যšত্ম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা ও আম্পান ঝড়ের ড়্গতি তারা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষীরা ফুলড়্গেেত ব্য¯ত্ম সময় পার করছেন।
প্রয়োজনমাফিক পানি দেয়া, স্প্রে করা, আগাছা নিড়ানো, মরা-রোগাক্রাšত্ম গাছ তুলে ফেলাসহ ড়্গতে পরিচর্যায় তাদের দম ফেলবার ফুসরত নেই। পাশাপাশি ড়্গতে থেকে ফুল তুলে নিয়ে ছুটছেন গদখালি ফুলবাজারে। দূর-দূরাšেত্মর ক্রেতারাও হাজির হচ্ছেন সেখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা আর হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা এলাকা।
গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গস্নাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষী। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ফুলের দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্য¯ত্ম।
ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একই সাথে বেশি দাম পাওযায় ফুল চাষীরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে ফুল-বেচাকেনা জমে উঠায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, করোনা ভাইরাস ও আম্পান ঝড় এই অঞ্চলের ফুল সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা।
গতবছর বসšত্ম উৎসব, ভালবাসা দিবস ও আšত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছিল। এর আগের দু’বছর চাষীরা কোনো ফুলই বিক্রি করতে পারেনি।
এ বছর আবহাওয়া ভাল হওয়ায় ফুল চাষের জমি যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদনও হয়েছে ভাল। একইসাথে বাজার পরিস্থিতি ভাল হওয়ায় আশা করা হচ্ছে, বেচাকেনা গত বছরের দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে। সেড়্গেেত্র ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অšত্মত ৭ শতাধিক হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে ফুল চাষ হয়ে থাকে।
বি¯ত্মীর্ণ মাঠজুড়ে গস্নাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলা, চন্দ্র মলিস্নকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। ডিসেম্বরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস থেকে শুরম্ন ফেব্রম্নয়ারিতে বসšত্ম উৎসব ও ভালোবাসা দিবস এবং মার্চে স্বাধীনতা দিবস ও পরে পহেলা বৈশাখ দিয়ে গোটা মৌসুম জুড়ে ফুল বিক্রি হয়।
গদখালী ফুলবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বসšত্ম ও ভালবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৮-১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ২৫-৩০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ৮-১০ টাকা, গস্নাডিওলাস ফুল রঙ ভেদে ৮-১৫ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১০-১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি চন্দ্রমলিস্নকা ৩ থেকে ৪ টাকায়, গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পানিসারা গ্রামের ফুলচাষী হাবিবুর রহমান জানালেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতিতে ফুলচাষীরা খুশি।
ফুলচাষী ও বিক্রেতা মোমিনুর রহমান জানালেন, এখন যে দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে, তা দু’একদিন পরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সারাদেশ থেকে পাইকাররা আসছেন। ফলে বসšত্ম দিবস ও ভালবাসা দিবসে ভাল দাম পাবেন ফুলচাষীরা।
ফুলড়্গেেত পরিচর্যা করতে করতে চাষী গোলাম রসুল জানালেন, এখন দম ফেলার ফুসরত নেই। শেষ মুহূর্তে ড়্গতে পরিচর্যা করে ফুল ধরে রেখে বাজারে তুলতে হবে। ফুলের মান ভাল থাকলে ভাল দাম পাওয়া যাবে।
যশোরের ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভাল হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।