সমাজের কথা ডেস্ক : রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়ী এলাকায় প্রাইভেটকার থেকে উদ্ধার হওয়া নারী—পুরুষের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ রহস্যবন্দিই রয়ে গেছে। তাদের মৃত্যুর প্রায় ৯ মাস পর কারও সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত, সার্বিক তদন্ত এবং বোতলের তরল পদার্থের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তাদের মৃত্যুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে গভীর তদন্ত ও সব দিক পর্যালোচনা করেও তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ না পাওয়া এবং এ বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ বা অভিযোগ না থাকায় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই আমিনুল কবির জানিয়েছেন।
<<আরও পড়তে পারেন>> যশোরে স্কুলছাত্র খুন
গত ৭ জুন রাত ১২টার দিকে দেলোয়ার হোসেন মোল্লা তাঁর স্ত্রী কাজল রেখাকে গাড়িতে জ্বালানি তেল নেওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরে ভোরের দিকে তেজগাঁওয়ে এলেনবাড়ী সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের পুকুরপাড়ে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো—গ ১৪—০৭২৫) থেকে নারী—পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে কাজল রেখা পুরুষ ব্যক্তিকে তাঁর স্বামী বলে শনাক্ত করেন। তিনি একটি সরকারি অফিসের সহায়ক ছিলেন। ওই এলাকার সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারেই পরিবার নিয়ে থাকতেন। আর গাড়িতে উদ্ধার হওয়া মৌসুমী আক্তার রানী স্বামী পরিত্যক্ত; তিনি ঢাকার উত্তরা—পশ্চিমের ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
সেই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেছিলেন, মৌসুমীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের কললিস্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই রাতে তাঁর ফোনে একাধিক ব্যক্তি ফোন করেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক, কেউ দিনমজুর। তারা মাঝেমধ্যে মৌসুমীর সঙ্গে রাত কাটাতেন।
ওই ঘটনায় মৃত দেলোয়ারের ছোট ভাই মিন্টু মোল্লা বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেন। পরে চার মাসের বেশি সময় তদন্ত করে গত ২৫ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে থানা পুলিশ ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ছিল— তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন, একটি কিনলে পানির বোতলে তরল পদার্থ ও একটি কোকা—কোলা বোতলে কোক জাতীয় তরল পদার্থ। তবে সিআইডি সেসব তরল পদার্থ পরীক্ষা—নিরীক্ষা করে জানিয়েছে, বোতলে বিষ জাতীয় কিছু ছিল না।
তদন্ত—সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মো. শহীদুল্লাহ নামে এক পথচারী ফজরের নামাজ আদায়ের পর বাসায় ফেরার পথে দেখেন, এলেনবাড়ী স্টাফ কোয়ার্টারের পুকুরপাড়ে ইঞ্জিন চালু একটি প্রাইভেটকার কাভার দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় পার্ক করা। তিনি আশপাশের লোকজন নিয়ে গাড়ির ওপর থেকে কাভার সরিয়ে দেখেন, দেলোয়ারসহ এক নারী বিবস্ত্র অবস্থায় পেছনের সিটে বসা, তবে তাদের কোনো সাড়া—শব্দ নেই। চিৎকার করেও তাদের সাড়া না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়। পরে তাঁর স্ত্রী কাজল ও ছোট ভাই মিন্টু এসে গাড়ির দরজা খুলে দেখেন, তারা মৃত। তাঁর ভাই গাড়িটি নিয়ে বাসার নিচে গ্যারেজে রাখেন। পরে তেজগাঁও থানায় জানালে পুলিশ গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল প্রতিবেদন করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশ পাঠায়।