সমাজের কথা ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেন ইসলামিক জিহাদসহ অন্যান্য ছোট ছোট প্রতিরোধ গোষ্ঠীর যোদ্ধারাও। এই লড়াইয়ের তীব্রতা উভয় অঞ্চলে কয়েক মাসের মধ্যে হওয়া লড়াইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বুধবার (১৫ মে) উভয় পক্ষ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জাবালিয়ায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং সেখানে হামাসের ব্যবহার করা সরু গলির কাছে ইসরায়েলি ট্যাংক পৌঁছেছে। তাদের শক্ত হাতে বাধা দিচ্ছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা সেখানকার এমন কিছু এলাকার বাড়িঘর ধ্বংস করেছে, যেখানে এর আগে কোনও অভিযান চালায়নি তারা।
হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, জাবালিয়ার পূর্বে তুমুল লড়াইয়ের সময় ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনীর অনেক সেনাকে হত্যা ও আহত করেছেন তাদের যোদ্ধারা।
আবু জিহাদ ছদ্মনামধারী এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘দখলদাররা ক্যাম্পটি ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাড়িগুলোতে বোমা ফেলছে। এমন অনেক পরিবার আছে যাদের আমরা চিনি, তারা বাড়ির ভেতর আটকা পড়েছেন।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জাবালিয়ার কেন্দ্রে ‘জঙ্গিদের স্থাপনায়’ রাতভর অভিযান চালিয়েছে তারা।
এক বিবৃতিতে বাহিনীটি জানিয়েছে, ‘গতকাল সন্ত্রাসীদের সেলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে অসংখ্য সন্ত্রাসীকে হটিয়েছে আইডিএফ।’ গাজার জরুরি পরিষেবা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমন সব স্থান থেকে সাহায্যের আবেদন আসছে, ‘যেখানে উদ্ধারকারী দলগুলো পৌঁছাতেই পারছে না।’
সশস্ত্র যোদ্ধারা সেখানে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে বলে জানিয়েছেন আবু জেহাদ। একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের যোদ্ধারা তাদের উচিত শিক্ষা দিচ্ছেন। হ্যাঁ, তাদের বিমান ও ট্যাংক আছে। তবে আমাদের যোদ্ধারা জাবালিয়াকে সুরক্ষা দিচ্ছে।’
গাজার সর্ব দক্ষিণের রাফাহ শহরে ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা পূর্বাঞ্চলীয় আল-সালাম ও জেনিনা এবং দক্ষিণের এলাকাগুলোতে সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংক ও সেনারা রাফাহ শহরের কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে হামাসের নেতৃত্বে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না তারা।
ইসরায়েল বলেছে, রাফাহর পূর্বে হামাসের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করেছে সেনারা। সেখানে তারা সশস্ত্র যোদ্ধাদের হত্যাসহ অসংখ্য অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
এর আগে, মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গণমাধ্যম খানের এক রিপোর্টার জানিয়েছিলেন, গত সপ্তাহে অভিযান শুরুর পর থেকে এটিই ছিল প্রথম কোনও ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা।
রাফাহ শহর ছাড়তে বেসামরিকদের নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। গাজায় জাতিসংঘের প্রধান ত্রাণ সংস্থা ইএনআরডব্লিউ’র অনুমান মতে, ৬ মে থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ মানুষ রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শহরটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।