সমাজের কথা ডেস্ক : অন্তত মানবিক কারণে যথাদ্রুত যুদ্ধবিরতি হওয়া চাই। দেশে দেশে এমন আহ্বান ও বিক্ষোভের সুর জোরালো হওয়া সত্ত্বেও, এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার পরও শান্তির বার্তা এতটুকু কানে তোলেনি ইসরায়েল। বরং আরও হিংস্র আরও পাশবিক রূপে দেখা গেল তাদের। অব্যাহত বিমান হামলার পাশাপাশি বড় পরিসরে স্থল সামরিক অভিযানও শুরু করেছে ইসরায়েল। সব মিলিয়ে গাজা হয়ে উঠেছে ‘আগুনের পিণ্ড’ এবং ‘আতঙ্ক ও ভয়ের উপত্যকা’।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার অবরুদ্ধ গাজার ভেতর সাঁজোয়া যান নিয়ে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী ও গাজার শাসকদল হামাস যথাসম্ভব কয়েকটি জায়গায় শত্রুশিবিরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েল এর আগে কৌশলগতভাবে গাজাকে বিশ^ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেÑ ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব ধরনের টেলিযোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, সেখানে ইসরায়েলি সেনারা বড় মাত্রার যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করতে পারে; আবার সেসব রেকর্ড করাও দুরূহ কারণ টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। এখন বোঝা গেল কেন সময়ক্ষেপণ করছিল ইসরায়েল।
জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই আল জাজিরাকে বলেছেন, পরিস্থিতি থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, দখলদারিত্ব শেষ করার সদিচ্ছা বোধহয় ইসরায়েলের নেই।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ‘অতর্কিত আক্রমণ’ চালায় হামাস। যদিও একে হঠাৎ হামলা বলা চলে না, কারণ দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে ফিলিস্তিনিরা। ওইদিনের হামলা ও এরপর হামাসের আক্রমণে এক হাজার ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। প্রথম দিন থেকে বদলা নিচ্ছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত সাত হাজার সাতশ তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; এদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার শিশু। বৃহৎ পরিসরে স্থল আক্রমণ শুরু হওয়ার কারণে আরও অনেক নিরীহ ও নিরস্ত্র প্রাণ ঝরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ^ খাদ্য প্রকল্পের প্রধান সিন্ডি ম্যাকেইন বলেছেন, গাজা এখন চরম পরিস্থিতিতে। তবে বিশে^র নীরবতা ভেঙেছে। মানবতার জয় অবশ্যম্ভাবী।
অন্যান্য ত্রাণ সংস্থার মতো জাতিসংঘের এই সংস্থাও গাজায় তাদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। ম্যাকেইন বলেন, ‘যেভাবে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে, আমি স্বেচ্ছাসেবী ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণরকম উদ্বিগ্ন।’
বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় আল শাতি শরণার্থী শিবিরে আবার ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে। সেখানে বাস্তুচ্যুত ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গত ২২ দিনের মধ্যে সেখানে কয়েক দফায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
শরণার্থী শিবির ছাড়াও হাসপাতাল ও শিক্ষালয় এমনকি উপাসনালয়েও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এ কারণে গাজায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। সেসবের বিচার আদৌ হবে কি না, যদি তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
আশা এটুকু যে, অন্য যে কোনো বারের চেয়ে এবার বিশ^ব্যাপী গাজা ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জোরালো বিক্ষোভ হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিরাও বিক্ষোভ করছেন; তারা বলছেন, তাদের নাম ভাঙিয়ে যেন ফিলিস্তিনিদের ওপর আর একটিও গুলি না ছোড়া হয়।
কিন্তু ইসরায়েল শুনবে কি? আমেরিকা তাকে থামতে বলবে কি?