এস হাসমী সাজু : তীব্র গরমের প্রভাবে অসুস্থ হচ্ছে কলেজ শিক্ষার্থীরাও। বৃহস্পতিবার যশোর শহরের দুই কলেজের ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজে ও হামিদপুর আল হেরা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে ৬ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা ক্লাস উন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদিকে মাগুরায় হিটস্ট্রোকে এক এনজিও কর্মির মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানাগেছে, গতকাল ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজে ক্লাস উন্নয়ন পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার হলেই ৮ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। একই সময় হামিদপুর আল হেরা ডিগ্রি কলেজের ক্লাসের মধ্যে দুইজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সহপাঠী ও শিক্ষকরা দ্রুত তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, দেহে তাপমাত্র বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা। তাপমাত্র ৯৮ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পার করলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। প্রচণ্ড গরমে পানি শূন্যতার কারণেই হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজের শিক্ষার্থী শহরের পুলিশ লাইন এলাকার সাগর হোসেনের মেয়ে ফাহিমা(১৮), শহরের রেল গেট এলাকার সেকেন্দার আলীর মেয়ে সায়রা সুলতানা(১৯), আরএনরোড এলাকার শফিকুর রহমানের ছেলে তাজীম হোসেন(১৯), নাজির শঙ্করপুর এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ঈমন হোসেন(১৯)।
এছাড়া সদর উপজেলার হামিদপুর আল হেরা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সদর উপজেলার ভায়না গ্রামের গোলাম সরোয়ারের মেয়ে জিম আক্তার নুপুর(১৮) এবং বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া গ্রামের রাকিব হোসেনেরে ছেলে জিসান(১৯)। তারা সবাই এইসএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজের আলিফ(১৯), তন্নি(১৯) আব্দুলাহ(১৮) আকিব হোসেন(১৯)।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সায়রা সুলতানা জানান, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজে ক্লাস উন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সময় হঠাৎ করে বুকে ব্যথ্যা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। পরে জ্ঞান ফিরে নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পাই।’
হামিদপুর আল হেরা ডিগ্রি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্লাস নিচ্ছে। ফলে একটি ক্লাস রুমে এক সাথে ৪০/৪৫জন ক্লাস করতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। জিম আক্তার নুপুরের মা রেহেনা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে যখন প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন সরকার। তখন উচ্চ মাধ্যমিক চালু রাখা হয়েছে। ক্লাস চালু থাকায় আর প্রচণ্ড গরমে গরমে ছেলে-মেয়েরা কলেজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজের উপধ্যাক্ষ মঞ্জরুল ইসলাম জানান, কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ছুটি ঘোষণা করেছে। উচ্চ মাধ্যমিক ছুটি ঘোষণা না দেওয়ার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ ছুটি দিতে পারে না।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুস সামাদ জানান, যশোরে গরমের শুরুতে হিট স্ট্রোকে কতজন অসুস্থ হয়েছে তা পরিসংখ্যান নেই। তবে বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালে পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে হিট স্ট্রোকের নতুন রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হচ্ছে। । এর ফলে গরমে হিট স্ট্রোকের হিসাব পাওয়া যাবে। প্রথম দিনে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০জন শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এদিকে মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওবাইদুল কাদের উজ্জল বলেন, হাসপাতালে আব্দুর রাজ্জাক কলেজের শিক্ষার্থী প্রাইমারি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদেরকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড গরমে শরীরে পানিশূন্যতা এবং দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ জন্য রোগীদের ঠান্ডা জাতীয় খাবার, ডাব, শরবতসহ বিভিন্ন খাবার যা শরীর ঠান্ডা রাখে এমন খাবার খেতে হবে। একই সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আব্দুর রহিম মোড়ল বলেন, এক সাথে অনেনে ক্লাস করার কারণে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।
এদিকে, মাগুরার মহম্মদপুরে তুলশী দাস বৈরাগী (৪০) নামে এক এনজিও কর্মী হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি মহম্মদপুর মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র পদক্ষেপের কমিনিউটি ম্যানেজারের পদে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ভাড়া বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তুলশী দাস ফরিদপুর জেলার কোটালীপড়া উপজেলার ধারা বাসাইল গ্রামের বিশ^নাথ বৈরাগীর ছেলে।
মহম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. তারেক জানান, সকাল ১০টা বেজে গেলেও তুলশি দাস অফিসে যাননি। তার সহকর্মীরা খোঁজ নিতে বাসায় এসে দরজার ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। তখন জানালা জোরে ধাক্কা দিলে খুলে গেলে তুলশি দাসকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখতে পায়। পরে স্থানীয়দের ডেকে দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ডাকাডাকি করলে কোন সাড়া শব্দ না মিললে পুলিশকে খবর দেয়।
পরে পুলিশ এসে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। তিনি জানান প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তীব্র গরমে গভীর রাতে হিট স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মাগুরা জেলা পুলিশের এএসপি সার্কেল শালিখা মো. মোস্তাফিজুর রহমান। মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসিত কুমার রায় এনজিও কর্মী তুলশি দাস বৈরাগীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।