সমাজের কথা ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤্নচাপটি গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ঝরছে। রোববার থেকে বৃষ্টি কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার সকালে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, গভীর স্থল নিম্নচাপটি বর্তমানে যশোর ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। তিনি বলেন, “এটা শনিবারের মধ্যে ভারতে চলে যেতে পারে। অল্প অল্প করে বৃষ্টি থাকবে, তবে আগামীকাল (রোববার) থেকে একটু কমবে।” শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। এ ছাড়া কক্সবাজারে ২২৫, চট্টগ্রামে ২০৩, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতিভারি বৃষ্টিপাত।
এদিকে আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
উপকূলীয় এলাকায় নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তিন উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
শনিবার সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নদীতে ‘প্রচণ্ড রোলিং’ থাকার কারণে যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা থেকে হাতিয়া, বেতুয়া ও খেপুপাড়াগামী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিপরীত পথে থাকা নৌযানকে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জ ও মতলব; বরিশাল নদীবন্দর থেকে বরিশাল উলানিয়া, কালিগঞ্জ ও কাচারীখাল; ভোলা নদীবন্দর থেকে ইলিশা-মজুচৌধুরীহাট, আলেকজান্ডার-হাকিম উদ্দিন নৌপথ, মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথে লঞ্চ ও সী ট্রাক চলাচল বন্ধ করা রয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পটুয়াখালী নদীবন্দর থেকে গলাচিপা-চরমোন্তাজ, গলাচিপা-চরবেষ্টিন, গলাচিপা-লক্ষ্মীরচর, উলানিয়া-চরমোন্তাজ, চিকনীকান্দি-চরমোন্তাজ নৌপথের নৌযান এবং বোয়ালিয়া-কোড়ালিয়া নৌপথের স্পিডবোট বন্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া কুমিরা-গুপ্তছড়া, বাঁশখালী-কুতুবদিয়া, পেকুয়া-কুতুবদিয়া, কক্সবাজার-মহেশখালী, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, নোয়াখালী-হাতিয়া, চট্টগ্রাম-হাতিয়াসহ সব নৌপথে নৌচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আরিচা-পাটুরিয়া-কাজিরহাট নৌপথের সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশুগঞ্জ, ভৈরববাজারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথেও যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
নদীর পানি বাড়ার আভাস, তলিয়ে যেতে পারে ৮ জেলার নিম্নাঞ্চল
ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নদীর পানি বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে শনিবার কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বিভাগের নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে।
এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। আর ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও ভারি বৃষ্টির কারণে আগামী দুই দিন এই তিন বিভাগের নদীর পানি বাড়তে পারে।
উত্তাল সাগর: পাথরঘাটায় ফেরেনি ২০ ট্রলারসহ ৩ শতাধিক জেলে
সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে এখনও সাগর থেকে কূলে ফিরে আসতে পারেনি ২০ ট্রলারসহ প্রায় তিন শতাধিক জেলে। তারা কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন কি না সেই তথ্যও দিতে পারছে না ট্রলার মালিক সমিতি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। গত দুদিনে যেসব জেলে ফিরে এসেছেন তারা জানিয়েছেন, সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ, ট্রলার নিয়ে সাগরে থাকা মুশকিল।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পাথরঘাটার ২০টি ট্রলার ফিরে আসতে পারেনি, ওইসব ট্রলার কোনো জায়গায় নিরাপদে আছে কি না তাও জানতে পারছি না। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ না থাকায় চার্জে দিতে না পেরে অনেকের মোবাইলফোন বন্ধ বিধায় পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না।