সমাজের কথা ডেস্ক : ক্ষমতাসীন দল, বিরোধীদল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর আগামীতে গণমাধ্যমও ভিসানীতিতে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। রবিবার দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
পিটার হাস বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় সরকারি দল, বিরোধীদল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা এসেছে। আগামীতে গণমাধ্যমও ভিসানীতিতে যুক্ত হবে।’
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে ভিসা বাতিল পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। কে বা কারা সেই তালিকায় আছেন জানতে চাইলে পিটার হাস কোনো জবাব দেননি। কতজন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন সে বিষয়েও মুখ খোলেননি পিটার। তিনি বলেন, ‘আমরা এই সংখ্যা বলতে পারি না।’
তখন পিটার হাসকে বলা হয়, সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে না পারলে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যারা ভিসা পাচ্ছেন কিংবা পাচ্ছেন না তাদের সঙ্গে আপনারা কথা বলে দেখতে পারেন। আমরা এই তথ্য প্রকাশ করতে পারি না। তবে কতজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো তা জরুরি নয়, বরং আমরা যেই বার্তাটা দিতে চাই সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভিসা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে পিটার বলেন, ‘আমরা এই নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছি। সরকারি সমর্থক হোক কিংবা বিরোধী দলীয় কেউ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য অথবা বিচার বিভাগের কেউ, এমনকি গণমাধ্যম— আমরা সবার ক্ষেত্রেই একই নীতি অনুসরণ করবো।’
পিটার হাস আরও বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কোনো ব্যক্তির আচরণের ওপর নির্ভর করছে, তিনি কে বা কী করেন তার ওপর নির্ভরশীল নয়। নির্বাচনে তারা কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেটাই লক্ষ্য রাখবো আমরা।’
মার্কিন ভিসা নীতি কোনো দেশের ওপর হস্তক্ষেপ নয় মন্তব্য করে পিটার হাস বলেন, ‘আমি দেখছি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে চায়ের দোকানদার পর্যন্ত সবাই একই কথা বলছেন। সবাই অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান। অর্থাৎ সবাই একই জিনিস চাচ্ছে।’
এই চাওয়া পূরণ করাই মূল চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই চাওয়া পূরণ করার ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ কাজটি সঠিকভাবে করতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ মে বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করে। এর চার মাসের মাথায় গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে সেসব ব্যক্তি এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এ নীতির আওতায় ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। এ ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিসেবার সদস্যরা রয়েছেন।
এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যে সাতজনের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল—মামুন এখন পুলিশের আইজি।