১০ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দানার প্রভাবে বৃষ্টি
খুলনা বিভাগে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, বেড়িবাঁধ নিয়ে উদ্বেগ

খুলনা প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়। একই সঙ্গে দমকা হাওয়াও বইতে থাকে মাঝেমধ্যে। উপকূলের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি মোকবিলা ও দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ১৮৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে খুলনায় ৬০৪, বাগেরহাটে ৩৫৯ ও সাতক্ষীরায় ৮৮৭টি।
উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও রোলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার দুপুরের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় নিতে পারেন। এসব শেল্টারে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ ও ৫৬০টি গবাদিপশু রাখা যাবে।’

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘ত্রাণ তহবিলে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা এবং ৭০৭ টন চাল মজুত আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আসার পর এগুলো প্রয়োজন অনুয়ায়ী ইউএনওদের মাধ্যমে বরাদ্দ করা হবে। কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা এই ৪টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র ৪৩১টি। এগুলোতে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।’

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আফজাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। উপকূলের সব নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুল আলম জানান, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার উপকূলীয় শ্যামনগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় উপজেলায় ১৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার মজুত রাখা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য দুই হাজার ৯৮০ জন সিপিপি সদস্যসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছেন।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও ফিল্টার, জি পলেস্টার মজুত রাখা আছে। যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, তার বিভাগের আওতাধীন প্রায় ৩০৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের ৩টি পয়েন্টে ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক জিও ব্যাগ, ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হয়েছে। লোকজন তাদের স্ব স্ব এলাকায় কাজ করছেন। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরায় ৮৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ লাখ টাকার গোখাদ্য, ৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য, ৮০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ অর্থ প্রায় ৭ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, ট্রলার ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দানা মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নদী তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, ‘উপকূলীয় এই জেলার মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও রামপাল উপজেলা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। আমরা দানা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ৮০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া শিশুখাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য তিন হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram