নেংগুড়াহাট (মনিরামপুর) প্রতিনিধি : মনিরামপুর উপজেলার নেংগুড়াহাট ও রাজগঞ্জের এলাকায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে কামারপল্লী র লোকেরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পল্লীতে টুং টাং শব্দ চলছে। দা, বটি, ছুরিসহ গৃহস্থালী নানা সরঞ্জাম বানাতে ব্যস্ত কর্মকাররা। এছাড়া এ সময় সব পরিবারের দা, বটি,হাসুয়া, ছুরি ধার করার প্রয়োজনীয়তাও তৈরি হয়। এ সব কাজে এখন রাতদিন ব্যস্ত হয়েছেন কর্মকাররা।
গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব,কারিগরদের মজুরি বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রীর বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সমস্য রয়েছে এর সাথে জড়িতদের। অনেকেই পেশা ছেড়ে অন্যকোনো পেশায় জীবন যাপন করছেন। তারপরও বছরের এই সময় ব্যস্ততা বাড়ে পেশায় যারা এখনো টিকে আছেন তাদের।
এক সময়ের সমৃদ্ধ নেংগুড়াহাট এলাকার কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে বছরে ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়ে-বাড়ে আর্থিক সক্ষমতা। বেচাকেনাও ভালো হয়। নেংগুড়াহাট এলাকায় গৌরীপুর গ্রামের রবিন কর্মকারের ছেলে নির্মল কর্মকার, রত্নশাহা পুর গ্রামের গোপাল কর্মকারের ছেলে সুব্রত কর্মকার, চালুয়াহাটি গ্রামের সুনিল কর্মকারের ছেলে মহবাসু কর্মকার বলেন, কামার শিল্পীদের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন দম ফেলারও সময় নেই। সারা কামারপাড়ায় অস্ত্রপাতি গৃহস্থালী, লোহার দ্রব্য তৈরিতে টুং টাং আওয়াজ চলছে।
এখান থেকে তৈরি ছুরি, কাঁচি, দা, বটি, কুড়াল বিভিন্ন হাটবাজারের বিক্রি হয় কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে বেচাবিক্রি।এভাবেও তাদের সংসারে আয় বেড়ে যায়, একটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলে কিছু দিন।
কামার শিল্পি সুব্রত কর্মকার ও তার ভাই বলেন,এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই।
মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না। তবে কুরবানির ঈদের সময় আমরা,একটু আশাবাদী হই। কামার শিল্পী দেবব্রত বলেন, বংশ পরম্পরায় আমরা এই কাজ করে আসছি।
আগে দেখতাম সারা বছর আমার বাপ দাদারা এই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু এখন সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। নেংগুড়াহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও প্রায় শতাধিক কামার পরিবার খেয়ে না খেয়ে পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছে।
সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানীর ঈদ আসলেই অধিক শ্রম দিয়ে বেশি আয়ের স্বপ্ন দেখে কামার পরিবারগুলো। কিন্তু কয়লা ও লোহার দাম বেশি হওয়ায় সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। তাপরও যারা এখনো এই পেশায় রয়েছেন, তারা স্বপ্ন দেখেন। তাদের মতে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা যতদিন থাকবে ততদিন এর প্রয়োজনীয়তা ও পেশা থাকবে। সেই আশায় তারা এখনো পেশাটাকে ধরে রেখেছেন।