সমাজের কথা ডেস্ক : ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। এক বছরে ৪৩২টি সড়ক দুর্ঘটনায় এখানে প্রাণ গিয়েছে ৩২০ জনের। আহত হয়েছেন ৫৯৪ জন।
হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সড়ক বিভাগ বলছে, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, মোটরসাইকেলের অনিয়মতান্ত্রিক চলাচল এবং যত্রতত্র পথচারী পারাপারের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের কানাইপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস এবং পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ ব্যক্তির প্রাণ গেছে। আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন আরও ১৫ জন।
এর আগে গত বছরের ১৯ মার্চ খুলনা থেকে ঢাকাগামী একটি বাস বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় সড়কের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে ১৯ যাত্রী নিহত হন। আহত হয় অন্তত ২০ জন।এ দুটি ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণহানি হলেও প্রায় প্রতিদিনই এ পথে লাশ পড়ছে।
তবে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস যে মৃত্যুর হিসাব দেয় সেটি তাৎক্ষণিকভাবে যারা মারা যান শুধু তাদের। আহত হয়েও অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক-দুদিন পরে মারা যান। তাদের হিসাব এর সঙ্গে যুক্ত করলে সেই সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে।
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে বা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এবং জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার।
গত এক বছরে এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ভাঙ্গা অংশে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৯৪ জন।
এদিকে মঙ্গলবারে ১৪ জনের মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বুয়েটের একজন প্রকৌশলীকে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত) মো. আলী সিদ্দিকীকে।
এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫ লাখ এবং আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৩ লাখ করে টাকা দেওয়া হবে।
হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর অঞ্চলের আওতাধীন ৩৮১ কিলোমিটার মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাঁচটি হাইওয়ে থানা, একটি ফাঁড়ি ও দুইটি ক্যাম্প।
হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর অঞ্চলের ফরিদপুর কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহিনুর আলম খান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এক বছরে মহাসড়ক দুটিতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যানবাহন চালানোর দায়ে ২৮ হাজার ৪০৪টি যানবাহন মালিককে মামলা দিয়ে ৯ কোটি ৪৩ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দুটিতে এক বছরে ৪৩২টি সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭১টি মামলা হয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম বলেন, “সড়কে চলাচলে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে, তা নাহলে থামবে না মৃত্যুর মিছিল। শুধু যাত্রীদেরই নয়; মালিক-শ্রমিককে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। “এ ছাড়া মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে মহাসড়ক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে”, বলেন পুলিশ সুপার।