কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে দ্বন্দের জেরে কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বাস চালক-শ্রমিকদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করার প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন। তবে অগ্রিম টিকিট বিক্রি থাকার কারণে শুক্রবার শুধুমাত্র কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সকাল থেকে চরম বিপাকে পড়েছে এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। এমন ভোগান্তি থেকে রক্ষায় অতি দ্রুত বাস-অটোরিকশা চালকদের দ্বন্দ্বের সমাধান চান তারা।
কুমারখালী থেকে শাহিন আলী তার পরিবার নিয়ে যাচিছলেন দৌলতপুরে। কুষ্টিয়া মজমপুর এসে সবরুটের বাস ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম বিপদে পড়েছেন।
তিনি বলেন, “আসলে আমরা কেউই নিজের ভালো-মন্দের বাইরে অন্যেরটা ভাবি না। হঠাৎ বাস বন্ধ করায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে কেউই গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না। সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।”
ফুসফুসের জটিলতায় অসুস্থ হয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাবিয়া খাতুন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকেও ছাড়া পেলেও বাড়ি যেতে পারছিলেন না তিনি। বাড়ি ফেরার পথে মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামের ভ্যানচালক রাজ্জাকের স্ত্রী সাবিয়া তাই মজমপুর গেটে এসে বসে আছেন।
তিনি বলেন, “মাঝে মধ্যে কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যাচ্ছে, কিন্তু ১০ টাকার ভাড়া তারা ৫০ টাকা চাচ্ছে। মরার উপর খাড়ার ঘা। আমাদের ভোগান্তি দেখার যেন কেউ নেই।” মোটর শ্রমিকনেতা আফজাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ভেড়ামারায় যাত্রী ওঠানো নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে বাস চালকদের তর্কাতর্কি হাতাহাতি হয়।
“একপর্যায়ে অটোরিকশা চালকরা আমাদের কয়েকজন চালকসহ শ্রমিকদের মারধর করে। এরই জের ধরে নিরাপত্তার অভাবে কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর প্রাগপুর ও মহিষকুন্ডি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।”
“পরে বিষয়টি সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হলে তাদের আশ্বাসে আবার বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার আবারও অটোরিকশা চালকরা আমাদের বাস চালকদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করে।”
তারই প্রতিবাদে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে কুষ্টিয়া থেকে খুলনা, রাজশাহী, মেহেরপুর, গোয়ালন্দসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখে কর্ম বিরতি পালন করা হচ্ছে জানান আফজাল হোসেন।
এ বিষয়ে সিএনজি চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান মাস্টার বলেন, “আমাদের অটোরিকশা চালক ভাইয়েরা সব সময় রাস্তায় বের হলেই বড় গাড়ির চালকদের গালি-গালাজের শিকার হতে হয়। অনেকদিন ধরে মারধর ও নির্যাতন সইতে সইতে এখন তারাও ক্ষেপে উঠেছে।”
বাসচালক-মালিকরা এখন ঢালাওভাবে সব দোষ তাদের উপর দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরাও চাই এর একটা সুষ্ঠ সমাধান হেক, বাসের চালক বাস চালাবে, সিএনজির চালক সিএনজি চালাবে, এখানে রেষারেষির কিছু নেই। রুটি রুজির মালিক আল্লাহ, কেউ কারোটা কেড়ে নিতে পারবে না।”
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. শারমিন আখতার বলেন, “কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় জনভোগান্তির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে বৈঠক আছে, আশা করছি একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।”