বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা ভারতের মতো বিশাল দেশের ফুটবল টিমকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সাফ অনূর্ধ্ব—১৬ মেয়েদের ফুটবলে টাইব্রেকারে গড়ানো ফাইনালে গোলকিপার ইয়ারজান ভারতের তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেশকে এনে দিয়েছে অনূর্ধ্ব—১৬ সাফ ফুটবলের শিরোপা। এর আগে অনূর্ধ্ব—১৫ শিরোপা জিতলেও এই প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব—১৬ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
এটি বিরাট গর্বের বিষয়। এর আগেও আমাদের মেয়েরা ফুটবলে দারুণ সব কৃতিত্ব দেখিয়েছে। দক্ষিণ এশীয় নারী ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পর স্বদেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকেই বীরকন্যা ফুটবলারদের অভূতপূর্ব রাজসিক সংবর্ধনা দিয়েছিল দেশবাসী— এটি আমাদের একটি সুখস্মৃতি। কিন্তু আমরা কি নারী ফুটবলারদের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি? যদি করতাম, তাহলে জাতীয় দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বিদায় নিতেন না। মেধাবী ক’জন ফুটবলারকেও হারাতাম না।
ফুটবলই বাংলাদেশের মানুষের আসল খেলা। ছাদখোলা বাসে ট্রফি হাতে বিজয়ীদের আনন্দ শোভাযাত্রা দেশে অভিনব। যা দেশের ক্রীড়াজগতে নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছে। ফুটবলপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে এমন অনুভূতির অনুরণন যেন চ্যাম্পিয়ন সাবিনা—সানজিদা—রূপনা—কৃষ্ণাদের হাত ধরেই এগিয়ে চলেছে বিজয়ীবেশে। বহু বছর দেশবাসী এমন অভিন্ন পরম আনন্দে উদ্বেলিত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিভাকে কদর করতে জানে।
তাই এতটুকু কার্পণ্য ছিল না বীরের বেশে দেশে ফেরা বাংলাদেশ নারী দলকে উচ্ছ্বসিত বরণ করে নেওয়ায়। কিন্তু শুধু উল¬াস নয়, আমাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যতের কথাও। আজ ছোট ছোট যেসব মেয়ে দেশকে গর্বিত করে তুলেছে, তাদের প্রত্যেকের জন্য চাই সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ ও যথাযথ পরিচর্যা। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের কৃপণতা কিংবা হীনম্মন্যতা কাম্য নয়। কিশোর বয়স থেকেই যদি আমরা মেয়ে ফুটবলারদের গড়ে তোলার সঠিক পথ রচনা করে দিতে পারি এবং অর্থ বরাদ্দ বাড়াই, সেক্ষেত্রে অনেক দূরে যাওয়ার স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি।
বর্তমান ক্রীড়ামন্ত্রী ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। আমরা আশা করব, তিনি ফুটবলের দিকেও সুনজর দেবেন। বিশেষ করে নারী ফুটবলারদের গড়ে তোলার বিষয়ে যে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা তার সমর্থন পাকÑ এটাই প্রত্যাশা। ফুটবল খেলায় বিশেষ কৌশলের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের শারীরিক শক্তি—সামর্থ্যও একটি বড় বিষয়। তাই ফুটবলারদের স্বাস্থ্যোন্নয়ন, বিবিধ সুযোগ—সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এর জন্য দরকার অর্থায়ন ও স্পন্সর।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বাফুফে সভাপতি বলেছিলেন, এটা কেবল নারীদের সফলতার শুরু, আগামীতে আরও সাফল্য আসবে। আমরাও এ বিষয়ে আশাবাদী। নারীদের কাছ থেকে ১৯ বছর পর সাফ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। আজ কিশোরীরা ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব ১৬ নারী ফুটবলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই সফলতাকে পুঁজি করে দেশের ফুটবলে নতুন গতি আসুক। ঘটুক নতুন বাঁকবদল। নারীদের সাফল্যের মধ্য দিয়ে প্রায় হতোদ্যম, ঝিমিয়ে পড়া দেশীয় ফুটবলে প্রাণের সঞ্চার হোক।