নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলের উপজেলার ফুলদাহ গ্রামে ফকির ও মোল্যা গোষ্ঠির সংঘর্ষের জেরে অর্ধশতাধিক পরিবারের পুরুষ সদস্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।
ফলে বোরো মৌসুমে এলাকার অন্তত পঞ্চাশটি কৃষক পরিবারের ৭শ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪টি সেচ পাম্প নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা।
বেশ কয়েকটি ঘেরের মাছও নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষরা। বাজারে যেতে না পেরে রান্না-খাওয়া ব্যাহত হচ্ছে, একপ্রকার অসহায় জীবন যাপন করছেন এ সকল পরিবারের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা।
এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হলেও যে কোনো সময় আবারও রক্তড়্গয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানাগেছে, কালিয়া উপজেলার ফুলদাহ গ্রামের ফকির ও মোল্যা গোষ্ঠির বিবাদমান দুইটি পক্ষ রয়েছে। ফকির পক্ষে নেতৃত্বে দিচ্ছেন সেলিম ফকির এবং মোল্যা পক্ষে নেতৃত্বে দিচ্ছেন ফসিয়ার মোল্যা।
গত ১৪ জানুয়ারি ফকির গ্রুপের বিপ্লব ফকির চাচুড়ি-পুরুলিয়া বাজারে গেলে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
পর দিন ১৫ জানুয়ারি রিংকু ফকিরকে আবারও মেরে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এসময় সৃষ্ট বিবাদে উভয় পক্ষের ১৫-১৬ জন আহত হন। ফকির গ্রুপের শরিফুল সরদার, তৈয়েব বেগ, রমজান, আলামিন বেগদের বাড়িসহ ৮-১০ টি বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে প্রতিপড়্গরা।
এসব ঘটনায় উভয় পক্ষ মামলা দায়ের করে। মামলায় উভয় পক্ষে অভিযুক্ত সকলেই বর্তমানে আদালতের জামিনে রয়েছেন।
গত ২৭ জানুয়ারি আবারও হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে আবারও প্রতিপক্ষ হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা প্রায় অর্ধশত পরিবারের পুরুষ সদস্যরা।
ফুলদাহ গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গির ফকির (৫২) বলেন, বোরো মৌসুমে চারা রোপণের সময় শেষের দিকে। পাটেরশারী বিলে তার ২০ বিঘা জমি এখনও অনাবাদি রয়েছে। প্রতিপক্ষের ভয়ে কেউ বিলে (জমিতে) যেতে পারছেন না।
তার মতে, এভাবে চলতে থাকলে এ সকল জমিতে এ বছর বোরো আবাদ করা যাবেনা। এলাকায় সংঘর্ষের আগে ১৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলেও পানির অভাবে সেই জমির ধানও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের আলাল মোল্য বলেন, ছয় বিঘা জমির মধ্যে ৪ বিঘা জমিতে আবাদ করলেও দুই বিঘা জমিতে এখনও আবাদ করতে পারেননি। যে জমিতে বোরো আবাদ করেছেন পানির অভাবে সেই জমির ধানও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের বাচ্চু শেখ বলেন, এখনও চার বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। দিদার শেখ বলেন, ছয় বিঘা জমির মধ্যে তিন বিঘা জমিতে চারা রোপণ করেছেন এবং তিন বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন নি।
গ্রামের মো. শরিফুল ইসলাম জানান, তার একটা স্যালো মেশিন এবং একটা মোটর নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষ। ঘেরের সব মাছও ধরে নিয়ে গেছে। ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন কিন্তু পানি দিতে যেতে পারছেন না। এখনও চার বিঘা জমিতে চাষই করতে পারেননি। তার চাচাতো ভাই দিদারুল সরদারে একটা মেশিনও নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা।
ফকির গ্রুপের নেতা সেলিম ফকির বলেন, মোল্লা গোষ্ঠির মধ্যে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। মূলত তার ইন্ধনেই ফকির বাড়ির লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। ভয়ে বাড়ির যুবতী মেয়েদের আত্মীয় বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৭ শত বিঘা জমির ধান চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হাটে-বাজারে যেতে পারছেন না অর্ধশতাধিক পরিবারের পুরুষরা।
অভিযুক্ত প্রতিপক্ষ মোল্যা গ্রুপের নেতা ফসিয়ার মোল্যার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে তার ছেলে সবুজ মোল্যা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের লোকজনদের উপর হামলা করে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হয়েছে।
এলাকায় দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশের এস আই টিপু সুলতান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তারা এলাকাতে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক আছে।