তহীদ মনি : কালনা সেতুর আদলে যশোর শহরে দুটি ব্রিজ করতে চায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ভৈরব নদের উপর বারান্দীপাড়া ও বাবলাতলা ব্রিজ নান্দনিক ও দর্শনী করতে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এজন্য প্রায় দুই হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। ব্রিজ সংলগ্ন সড়কও হবে ৪ লেন বিশিষ্ট। এ কাজের জন্য ৪৫১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে সওজ।
প্রস্তাবনায় আছে, শহরের পালবাড়ি থেকে শিক্ষা বোর্ড হয়ে মণিহার পর্যন্ত সড়কটি ৪ লেন করা । ৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও উভয়পাশে ড্রেন কাম ফুটপথসহ ৯০ ফুট চওড়া সড়কটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সড়ক ও দুটি ব্রিজ নির্মাণে ৩শ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এছাড়া ১৫১ কোটি টাকা ব্যয় হবে ১২টি পয়েন্টে প্রায় দুই হেক্টর জমি অধিগ্রহণে। ৪ লেনের মূল সড়কের মাঝে থাকবে দেড় মিটারের ডিভাইডার, ডিভাইডারের উভয় পাশে ২৪ ফুটের রাস্তা, তারপাশে ধীরগতির গাড়ির জন্যে প্রতিপাশে ৫ ফুটের হার্ড সোল্ডার। ড্রেনের উপর স্লাব বসিয়ে তৈরি করা হবে ফুটপাত । বারান্দীপাড়া ও বাবলাতলা ব্রিজের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৮২ মিটার। সেখানে ডিভাইডার থাকবে না বিধায় প্রশস্ততা হবে প্রায় ২৩ মিটার।
এ ব্রিজ দুটির প্রতিপাশে ১১০ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক থাকবে। আর স্ট্যান্ডার্ড ওয়াটার লেভেল থেকে ৫মিটার উঁচুতে গার্ডার হওয়ায় বর্তমান ব্রিজ থেকে প্রায় ৩ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। সে হিসেবে প্রতিটি ব্রিজে শুধু নির্মাণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। ৩ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প সরকার অনুমোদন দিলে ২০২৪ সাল থেকে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফাইলটি অনেকদূর এগোলেও নির্বাচনের আগে কাজ শুরুর সম্ভাবনা কম।
এছাড়াও মণিরামপুর বাজারের তীব্র যানজট ও ভোগান্তী কমাতে ২০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে লিঙ্ক রোড করার একটি প্রস্তাবনা আগামী সপ্তাহে জমা হতে যাচ্ছে। ৩ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটিও নির্বাচনের পর পাস হতে পারে এবং ২০২৪ সালে কাজ শুরু হতে পারে। প্রকল্পের নক্সা অনুযায়ী হাজরাকঠি থেকে কামালপুর হয়ে বিজয়পুরে শেষ হবে সড়কটি।
রাজারহাট থেকে চুকনগর পর্যন্ত সড়কের যে ডিজাইন রয়েছে সেই আদলে সড়কটি নির্মাণ করা হবে। এ লিঙ্ক সড়কের দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ২৫ কিলোমিটার করতে ২০ দশমিক ৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ২০ হেক্টরের বেশি এই জমি অধিগ্রহণে খরচ ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা এবং একটি ছোট ব্রিজসহ সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা। এই সড়কের প্রশস্ততা হবে ৩৪ ফুট।
সড়ক বিভাগের আওতায় চলমান রয়েছে নড়াইল হয়ে যশোর কালনা সড়কের যশোরাংশের ২০ কিলোমিটারের কাজ। এই ২০ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট বৃদ্ধি হচ্ছে। বর্তমানের ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটিকে ২৪ ফুট প্রস্থ করা হচ্ছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া কাজটি এ বছরেই শেষ হবে। ৬ ফুট বৃদ্ধি করার পর পুরো ২০ কিলোমিটার সড়কে ডাবল বিটুমিন সার্ফেসিং ট্রিটমেন্ট(ডিবিএসটি) করলেই সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত হয়ে যান চলাচলে সহজীকরণ হবে, যশোর থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে ঢাকা যাতায়াত হবে আরও সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। এ কাজে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ কোটি টাকা।
যশোর সড়ক বিভাগ চলতি মাসে আরও একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। যশোর মণিরামপুর সড়কের সতীঘাটা থেকে কামালপুর হয়ে কুয়াদা বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ কিলোমিটারের এই সড়কটি সম্পন্ন করতে ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ১২ ফুট প্রস্থের এই সড়কের কাজ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছিল, নির্দিষ্ট মেয়াদ অর্থাৎ চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে তার শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে সড়ক বিভাগ জানায়।
এছাড়া শেষের পথে মুড়লি টু মণিহার এলাকার ৬ লেনের কাজ। চলছে দড়াটানা ব্রিজের জন্যে নতুন ডিজাইন করার কাজও।
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, যোগাযোগ ও সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নে যশোরে কয়েক বছর ধরে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। এখনো আরো কাজ হবে। ইতোমধ্যে মণিহার থেকে মুড়লি রাজারহাট হয়ে চুকনগর পর্যন্ত সড়ক হয়েছে, মণিহার মুড়লি অংশের কাজ শেষের পথে, এটি শেষ হলে যশোর খুলনা মহাসড়কের ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হবে, ঝিনাইদহ থেকে পালবাড়ি-আরবপুর-চাঁচড়া সড়কের কাজ শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণ চলছে।
চাঁচড়া বেনাপোল সড়কের কাজ হয়েছে। সতীঘাটা থেকে সাড়ে ১৪ কিলোমিটারের অঞ্চলিক সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। যশোর-কালনা সড়কের ২০ কিলোমিটারের কাজ শেষের পথে, মণিরামপুর বাজারের দীর্ঘদিনের ভিড় ও সরু এলাকা এড়াতে ৫ কিলোমিটারের বেশি লিঙ্ক সড়ক করার প্রস্তাবনা দেওয়া হচ্ছে। পালবাড়ি-বোর্ড অফিস-মণিহার পর্যন্ত ৪ লেনের কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সাথে ২টি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ করার কথা রয়েছে।
এছাড়া শহর রক্ষা করে নতুনভাবে দড়াটানা ব্রিজটির ডিজাইন করা হচ্ছে। এর সবগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পর যশোর শহরে যেমন যানজট ও চলাচলের সমস্যা দূর হবে তেমনি সড়ক ও মহাসড়কগুলো প্রশস্ত এবং আধুনিকায়ন হওয়ায় জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।