সমাজের কথা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এর মধ্যেই ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অগ্নিঝরা বিতর্ক অনুষ্ঠিত হলো, যা দোদুল্যমান ভোটারদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথকে সহজ করেছে। মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত ৯০ মিনিটের ওই টেলিভিশন বিতর্ক দেখেছেন– এমন ছয়জন গণমাধ্যমকে জানান, আগামী নভেম্বরে তারা কাকে ভোট দেবেন, সে সিদ্ধান্ত নিতে এ বিতর্ক তাদের সহযোগিতা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ছয়জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। বুধবার তারা যা বলেছেন, তাতে ট্রাম্পের চেয়ে স্পষ্টভাবে এগিয়ে থাকছেন কমলা। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য উইসকনসিন থেকে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটির সঙ্গে কথা বলেন ভেনেসা প্রাইস। বিতর্কের আগে তিনি ট্রাম্পের সমর্থক ছিলেন। এখনও তা-ই আছেন। তবে কমলার প্রদর্শনী তাঁকে মুগ্ধ করেছে। ভেনেসা বলেন, ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার সিদ্ধান্তকে এ বিতর্ক পরিবর্তন করবে– এমনটা মনে করি না। তবে কমলাও যদি জেতেন, তাতে আমার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ তিনি চালিয়ে নিতে পারবেন।
ইউটা অঙ্গরাজ্যের জেরেমি পিটারসেন ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না। তবে ২০১৬ ও ২০২০ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটদেরও ভোট দেননি। এবার তিনি কমলাকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতের বিতর্কের কারণে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে তিনি আতঙ্কে আছেন। বিশেষ করে অভিবাসন ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা তাঁর মধ্যে ভর করেছে। তিনি বলেন, আমি কমলাকে খুব পছন্দ করি– এমনটা নয়। তবে তিনি ট্রাম্পের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি নন।
দক্ষিণ ক্যারোলিনার ট্র্যাসি মারডকও বিতর্ক দেখেছেন। তবে তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল আছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, উভয় প্রার্থী খুব সুন্দর করে কথা বলেছেন। তবে ট্রাম্পের চেয়ে বেশি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কমলা। ট্র্যাসি বলেন, ট্রাম্পের ওপর আমার আস্থা নেই। আমি মনে করি না, তিনি দেশ চালানোর যোগ্যতা রাখেন। ট্রাম্প দেশের মালিকানা পেতে চাইছেন।
ওয়াহাইওর উইলিয়াম হোয়েকজেমা মনে করেন, এ বিতর্কের মাধ্যমে উভয় প্রার্থীর অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে। বিতর্ক দেখেই তিনি কমলাকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন। টেলিভিশন বিতর্কের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ট্রাম্প সবসময় সরব ছিলেন। তিনি অনেকগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন; কিন্তু অভিবাসন ও গর্ভপাত নিয়ে যথাযথভাবে জবাব দিতে পারেননি। উইলিয়াম বলেন, এ বিতর্কের জন্য ট্রাম্পের চেয়ে কমলাকে অনেক বেশি প্রস্তুত মনে হয়েছে।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের রোহান বিজয়ন সীদ্ধান্তহীন ছিলেন। বিতর্কের পর এখন তিনি ৫১ শতাংশ কমলার সমর্থক; আর ৪৯ শতাংশ ট্রাম্পের। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের এখনও সময় আছে বলে জানান তিনি। রোহান বলেন, আমি মনে করি ট্রাম্প কিছুটা চূর্ণ হয়েছেন, যা তাঁকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। তবে পুরো বিতর্ক বেশ কৃত্রিম মনে হচ্ছিল। আমি কমলার কাছে আরও বেশি স্বাভাবিকতা প্রত্যাশা করছিলাম।
আরকানসাসের চান্স ফিলিপ বিতর্ক নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন। তিনি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি মনে করি না, বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা হয়েছে। পুরো বিতর্কের অধিকাংশ সময়ই দুই প্রার্থী একে অপরকে নিয়ে বলছিলেন। আমি আসলে হতাশ। এ দু’জনের কারোই ভক্ত আমি নই। তবে কাউকে যদি শেষ পর্যন্ত বাছাই করতেই হয়, তবে তিনি হবেন কমলা।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে এটি ছিল প্রথম টেলিভিশন বিতর্ক। এর আগে একটি বিতর্ক হলেও তা ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে হয়েছিল। ওই বিতর্কে বাইডেনের ভরাডুবি হয়। এতে চাপের মুখে তিনি প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালে প্রার্থী হন কমলা হ্যারিস। এ বিতর্কে কমলা এগিয়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।