মনের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু উদয় হওয়াকে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সন্দেহপ্রবণতা) বলা হয়। এটা একটি মানসিক রোগ, কুমন্ত্রণার ফাঁদ— যা একজন মুসলিমকে বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তানের পক্ষ থেকে মনে আসে। মানুষ মাত্রই কমবেশি বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণায় আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু এই বিষয় জ্ঞান না থাকলে, একজন সাধারণ ব্যক্তি ধীরে ধীরে মানসিক রোগীতে পরিণত হতে পারে; এ জন্য সতর্কতা কাম্য।
যে কাজগুলো করলে শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে, সেই কাজ থেকে বিরত থাকা। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে, পরিপূর্ণরূপে পবিত্রতা হাসিল করা। নামাজের জন্য পরিপূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করলে শয়তান আর নামাজের মধ্যে কুমন্ত্রণা দিতে পারবে না। যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে তিনি গোসল ঠিকমতো করবেন, আর যার ওপর অজু ফরজ হয়েছে তিনি যথাযথভাবে অজু করবেন, তাহলে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত হলো, শয়তান আল¬াহর বান্দাকে নামাজের মধ্যে অমনোযোগী করে দেয়। অমনোযোগী করে এই জন্য, যাতে বান্দা ইবাদত করতে না পারে। যখনই অমনোযোগিতা দেখা দেবে, তখনই বান্দা আল¬াহর কাছে শয়তান থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করা। হজরত রাসুলুল¬াহ (সা.) আউযুবিল¬াহর যে দোয়া শিখিয়েছেন সেগুলোর আমল করা।
তৃতীয় বিষয় হলো, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য তওবা করা। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন যে, এক মজলিসে নবী কারিম (সা.)—কে বলতে শুনেছি, ‘নবী কারিম (সা.) ইস্তেগফার করছেন সত্তরেরও বেশি।’ ইস্তেগফার শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বান্দাদের দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমল : ওয়াসওয়াসার কারণে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির—আজকারসহ কোনো ইবাদতে মন বসে না। মনে সৃষ্ট এসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকাসহ পুনরায় আমল ও ইবাদত—বন্দেগির জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য কোরআন মাজিদের চিকিৎসা গ্রহণের বিকল্প নেই। উলি¬খিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য ৪টি আমল রয়েছে। সেগুলো হলো—
এক. ‘আউজুবিল¬াহি মিনাশ—শায়ত্বানির রাজিম’ পড়ার মাধ্যমে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে হেফাজত থাকা।
দুই. সুরা ফালাক ও সুরা নাস তেলাওয়াত করা।
তিন. বেশি বেশি আল¬াহর জিকির করা। বিশেষ করে এ জিকির করা— উচ্চারণ : ‘আল¬াহুম্মা মুসাররিফাল কুলুবি সাররিফ কুলুবানা আলা ত্বায়াতিকা।’ অর্থ : হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী আল¬াহ! আমাদের অন্তরকে তোমার আনুগত্যের দিকে পরিবর্তন করো।’ —সহিহ মুসলিম
এ দোয়াও পড়া যেতে পারে, উচ্চারণ : ‘ইয়া মুকালি¬বাল কুলুবি সাব্বিত কালবি আলা দিনিকা।’ অর্থ : হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর দৃঢ় রাখো।’ —জামে তিরমিজি
চার. মনে জাগ্রত হওয়া কুচিন্তার দিকে ধ্যান বা খেয়াল না দিয়ে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া। উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া আতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহিম।’ অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী, দয়াময়।’ —সুনানে আবু দাউদ
মনে রাখতে হবে, উলি¬খিত ৪ কাজ যথাযথভাবে করতে পারলে মনের মধ্যে সৃষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্ব, কুমন্ত্রণা বা ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা সহজ। আর তাতেই মনের মধ্যে ইবাদত—বন্দেগির প্রবল আগ্রহ তৈরি হবে। যাবতীয় কুচিন্তা দূর করতে উলি¬খিত আমল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
এ ছাড়া আলেমরা আরও বলেন, কোনো বিষয়ে মনের মধ্যে কুচিন্তা আসলে, তা গুরুত্ব না দেওয়া। মানুষের মনের মধ্যে উদ্রেক বা জাগ্রত হওয়া কুচিন্তার জন্য কোনো মুমিনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। যখনই মানুষ কুচিন্তা বাস্তবায়ন করবে তখনই সে গোনাহগার হবে কিংবা এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।