ক্রীড়া ডেস্ক : ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল। ফরম্যাট বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেলো আইরিশদের চেহারা। বৃহস্পতিবার আগে ব্যাটিং করে আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন করে ১৬৯ রান স্কোরবোর্ডে তুলেছে আয়ারল্যান্ড। কঠিন এই লক্ষ্যে শেষের দিকে খেই হারিয়ে ১২ রানে পরাজিত হয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে মাঠে নামে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আয়ারল্যান্ড। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ড ভালো দল। সেই ধারাবাহিকতায় বজায় রাখলো প্রথম ম্যাচে। বাংলাদশের বোলারদের খুব একটা পাত্তা না দিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা করেছে।
১৭০ রানের কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। আইরিশ ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতের সুযোগ নিয়ে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের মেয়েরা তুলে ফেলে ১০৩। ওপেনিং জুটিতে যা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটি। প্রথম পাওয়ার প্লেতেই বাংলাদেশ তোলে ৫৬ রান। ওপেনার দিলারা ছয়বার ক্যাচ তুলে বেঁচে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত ৪৯ রানে থামতে হয় তাকে। দিলারার মতো জীবন না পেলেও বেশ কয়েকবাজ জীবন পান আরেক ওপেনার সোবহানা মোস্তারি। এই ব্যাটার ব্যক্তিগত ৪৬ রানে ফেরার পরই মূলত ওপেনিং জুটি ভাঙে।
ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন মোস্তারি। ৩৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় মোস্তারি খেলেছেন ৪৬ রানের ইনিংস। এরপর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ৫ বলে ৪ চার রান করে আউট হন। স্কোরবোর্ডে আরও ১ রান যোগ হতে আউট হন দিলার। ৪১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান দিলারা। মাত্র ৭ রানে টপ অর্ডার তিন ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।
চাপে পড়লেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের হাতে। এরপর শারমিন আক্তার ও তাজ নাহার মিলে ২০ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন। ১৭তম ওভারের শেষ বলে তাজ ১৪ বলে ১৯ রান করে আউট হওয়ার পর ফের চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ তিন ওভারে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান। ১৮তম ওভারে ১৫ রান নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে বাংলাদেশ। শেষ দুই ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৮ রানের। কিন্তু রান তোলা তো দূরে থাক, বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে দুই উইকেট। ওরলা প্রেন্ডারগাস্ট ১৯তম ওভারটি মেইডেন নেন। পাশাপাশি আদায় করেন তাজ ও রিতু মনির উইকেট। তাতেই শেষ ওভারে কঠিন চাপে পড়ে ম্যাচ আর বের করতে পারেনি জ্যোতিরা। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৫৭ রানে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১২ রানে হার দিয়ে শেষ হয়। শারমিন সুলতানা ১৩ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
আইরিশ বোলারদের মধ্যে ওরলা প্রেন্ডারগাস্ট ও আর্লিন কেলি প্রত্যেকে তিনটি করে উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০১৮ সালে ডাবলিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে করা ১৫২ রানের রেকর্ড ভেঙে দেন আইরিশ মেয়েরা। যা এতদিন ছিল এই সংস্করণে বাংলাদেশের বিপক্ষে আইরিশ নারী দলের সর্বোচ্চ স্কোর। আজ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আইরিশরা করেছে ১৬৯ রান।
তবে শুরুটা ভালো ছিল না তাদের। দলীয় ১৬ রানেই ভেঙে যায় আইরিশদের উদ্বোধনী জুটি। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে আয়ারল্যান্ডের উইকেটরক্ষক অ্যামি হান্টারকে বোল্ড করেন জাহানারা আলম। প্রথমে ৬ রানরেট থাকলেও বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সেটা ধরে রাখতেই কষ্ট হচ্ছিল আইরিশদের। পাওয়ার প্লেতে (প্রথম ৬ ওভারে) ১ উইকেটে ৩৫ রান করে আয়ারল্যান্ড। সপ্তম ওভারের শেষ বলে ওরলা প্রেন্ডারগাস্টকে বোল্ড করেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ১৫ বলে ১১ রান করে প্রেন্ডারগাস্ট ফিরলে আইরিশদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ ওভারে ২ উইকেটে ৪৬ রান।
শুরুতে দেখে শুনে খেলা আয়ারল্যান্ড সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে আয়ারল্যান্ড পেয়ে যায় বড় স্কোরের ভিত। এই উইকেটে ৬৪ বলে ১০৭ রানের জুটি গড়তে অবদান রাখেন লুইস ও লিয়া পল। যদিও শেষ দিকে এসে সেভাবে ঝড় তুলতে পারেনি তারা। শেষ ১৪ বলে ২ উইকেট হারিয়ে ১৬ রান যোগ করতে পারে সফরকারীরা। সবমিলিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৯ রান করে আয়ারল্যান্ড। ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৯ রান করে অপরাজিত থাকেন পল।
বাংলাদেশের জাহানারা আলম, ফারিহা, জান্নাতুল, নাহিদা আক্তার নিয়েছেন একটি করে উইকেট। প্রত্যেকে ৪ ওভার করে বোলিং করেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম ২০ রান দিয়েছেন নাহিদা।