নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের কর্মী আব্দুল কুদ্দুস হত্যা মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সাক্ষীরা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিচারক এ মামলার অপর চার আসামিকে খালাস দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সামছুল হক এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলো, ঝিকরগাছার মল্লিকপুর গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে ইউনুস আলী ও মৃত মনু মিয়ার ছেলে রনি মিয়া। এদের মধ্যে ইউনুস আলী কারাগারে আটক আছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, আব্দুল কুদ্দুস জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ঝিকরগাছা উপজেলার কীর্তিপুর শাখায় মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি মল্লিকপুর ও কিক্তিপুর গ্রামে কিস্তির টাকা আদায়ে বের হন। এরপর তিনি আর অফিসে ফিরে আসেননি এবং তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ছিল।
শাখা ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন তার সন্ধান না পেয়ে ওই গ্রামে খেঁাজখবর নিতে যান এবং জানতে পারেন আব্দুল কুদ্দুস ওই গ্রামের ইউনুস আলীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। শাখা ব্যবস্থাপক সর্বশেষ ইউনুসের বাড়িতে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান আব্দুল কুদ্দুস তার বাড়িতে আসেনি।
এরপর জাগরণী চক্রের লোকজন ওই এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে ইউনুসের বাড়ির পাশে কচু খেতে আব্দুল কুদ্দুসের ছাতা পাওয়া যায়। এরপর পুলিশ ও নিখেঁাজ আবদুল কুদ্দুসের পরিবারের লোকজন মল্লিকপুর গ্রামের আসে। এরপর রাতে সন্দেহজনক ভাবে ইউনুসের বাড়ির সংলগ্ন পুকুরে তল্লাশি করে বস্তাবন্দী আব্দুল কুদ্দুসের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল কুদ্দুসের ভাই মাগুরা শালিখার বাগডাঙ্গা গ্রামের নুরুল আমিন মোল্যার ছেলে শামসুর রহমান বাদী হয়ে ৫জনকে আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলো, ইউনুচ আলী, রনি, কোরবান, শামীম ও রুবেল।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা আব্দুল কুদ্দুসের আদায় করা কিস্তির টাকা কেড়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে আসামিরা। এরমধ্যে আব্দুল কুদ্দুস কিস্তির টাকা আনতে যায় ইউনুচের বাড়ি। এসময় ইউনুচ কিস্তির টাকা দিতে পাবেনা বলে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে কুদ্দুসকে মারপিট করে ঘরের মধ্যে নিয়ে যায় আসামিরা। এরপর গলায় রশিদিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম করতে বস্তায় ভরে তার সাথে ইটভর্তি একটি বস্তা বেধে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেয় আসামিরা।
মামলার তদন্ত শেষে আসামির দেয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রব আকন্দ।
মামলা সাক্ষ্য গ্রহণকালে অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মল্লিকপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ মারা যাওয়ায় তাকে অব্যহতি দেয় হয়।
দীর্ঘ সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামি ইউনুচ আলী ও রনি মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমণিত হওয়ায় বিচারক তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। মামলার ওপর চার আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষীরা অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিচারক তাদের খালাস দিয়েছেন।