২০শে জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এক যুগ ধরে বন্ধ প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের ফকিরহাটে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের গ্রামীণ পুনর্বাসন উপকেন্দ্রটি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বাক—শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবকদেরকে কারিগরি প্রশিক্ষনের জন্য তৈরী হলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় নিজেই যেন প্রতিবন্ধী হয়ে আছে এক যুগ ধরে! প্রশিক্ষক, কর্মকর্তা—কর্মচারীরা ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত বেতন ভাতা পেলেও নেই কোন প্রশিক্ষণার্থী! প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেটি দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখায় লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা—খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার মূলঘর এলাকায় সুবিশাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ৩ একর ৬০ শতক জমিতে অবস্থিত দেশের একমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধীদের গ্রামীণ পুনর্বাসন উপকেন্দ্রটির প্রধান ফটকে তালা। প্রতিষ্ঠানটির ওয়ার্কসপ ট্রেডের প্রশিক্ষক আব্দুস সাত্তার জানান ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ২০১২ সালে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার আগে এখান থেকে ৩১৯জন প্রতিবন্ধী যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ১২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, একবছর মেয়াদী ৩টি প্রশিক্ষণ কোর্সে ৩০ জন করে প্রতিবন্ধী যুবক নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতো। মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ, টেইলারিং ও হাঁস—মুরগি পালন প্রশিক্ষণ শেষে উপকরণসহ নগত ৪ হাজার টাকা প্রদান করা হতো। সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণার্থীরা আসতেন এখানে প্রশিক্ষণ নিতে। প্রশিক্ষণ শেষে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বাবলম্বীও হয়েছেন অনেকে। বন্ধ হওয়ার প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক প্রতিবন্ধীরা ভর্তি হতে আসতো এখানে। এখনও মাঝে মধ্যে প্রশিক্ষনের জন্য প্রতিবন্ধী যুবকেরা ভর্তি হতে এসে ফিরে যায় বলে জানান প্রশিক্ষক আব্দুস সত্তার।
সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আংশিক সংস্কার করা হলেও আবাসিক ভবনের অভাবে তা আর চালু করা যায় নি। বর্তমানে কেন্দ্রটির সুবিশাল আবাসিক ভবনের খসে যাওয়া কাঠামো কোন মতে দাড়িয়ে আছে। আগাছা আর লতাপাতায় ঘেরা ভূতড়ে পরিবেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একজন প্রশিক্ষক, একজন ক্লার্ক ও একজন বার্তা বাহক আছেন। এদের মধ্যে প্রশিক্ষক ছাড়া বাকী ২জন জেলা সমাজসেবা অফিসে সংযুক্ত আছেন।
২০১০—১১ অর্থবছর থেকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৩টি ট্রেডে প্রায় ২১ ধরণের লেদ মেশিন, গ্রাইন্ডিং মেশিনসহ প্রশিক্ষণের বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে আছে। ২০১৬ সালে জেলা নিলাম কমিটি আবাসিক হোস্টেলটি নিলামের মাধ্যমে অপসারনের সুপারিশ করে। ২০২০ সালে সমাজসেবা দপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট অনুমতি চেয়ে আবার পত্র প্রেরণ করেও কোন সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চালুর বিষয়ে কোন আশার কথা শুনাতে পারেনি না প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজসেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা।

প্রতিবন্ধী বোঝা নয়, বরং তাকে সম্পদে পরিনত করার উদ্দেশ্যে চালু হওয়া সমাজসেবা দপ্তরের এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার দাবী করেন এলাকাবাসী। উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে কর্তৃপক্ষকে বার বার চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। শুধু ফাইলবন্ধী চিঠির সংখ্যাই বেড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অতিশ সরদার বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ পুনর্বাসন কেন্দ্রটির বর্তমান অবস্থা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসেন এখানে।’
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রশিক্ষণ পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু করার চেষ্টা অব্যহত আছে। আর তা সম্ভব না হলে আমরা বেকার যুবকদের অনাবাসিক প্রশিক্ষনের জন্য কেন্দ্রটি চালুর প্রস্তাব করেছি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram