এস আর সাঈদ, কেশবপুর (যশোর) : আজ ৩০ এপ্রিল সফল শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৪ সালের ৩০ এপ্রিল কেশবপুরের বড়েঙ্গা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যেসব ব্যক্তিবর্গ তাঁর প্রশাসনকে সমুজ্জ্বল করেছিলেন এবং যথাযথ দায়িত্ব পালন কালে রাষ্ট্রকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে যাঁদের অসামান্য অবদান ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক।
কেশবপুরের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রাণপুরুষ, আধুনিক কেশবপুরের রূপকার, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আবু শারাফ হিজবুল কাদের সাদেক (এ. এস. এইচ. কে সাদেক) ছিলেন সাবেক সচিব, দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী। তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে একজন সিএসপি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৭০-৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাফিল ফাউন্ডেশন থেকে ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান এবং পরবর্তীতে কুমিল¬ার জেলা প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের একজন সচিব হিসেবে কাজ করেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল এএসএইচকে সাদেকের অসামান্য অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহরের এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত তার সরকারি বাসভবন ১নং টেনামেন্ট হাউজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ঘাঁটি। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই তাঁদের অস্ত্র গোলাবারুদ এই সরকারি বাসভবনে রাখতেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী প্রায়ত সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক উভয়েই মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রদানসহ সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মরহুম সাদেক স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মদের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির প্রধান সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী বেগম ইসমাত আরা যশোর-৬ (কেশবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
এএসএইচকে সাদেক তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতাময় জীবনে জনপ্রশাসনের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইউএনআইডি-এর প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ এবং আঞ্চলিক শিল্প উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ২৫ মার্চ ১৯৮৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচত হন।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত করেছিলেন। দেশের সকল ফলাফলে ‘জিপিএ’ সিস্টেম চালু করার পাশাপাশি সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল ব্যাপক। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরূপে স্বীকৃতি প্রদান এবং সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছিলেন।
২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসীন, তখনো তিনি যশোর-৬ কেশবপুর থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০০৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরণ করেন।