নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর (যশোর) : যশোরের মণিরামপুরে ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক উদয় শংকর বিশ্বাসকে (৪২) গুলি করে হত্যার পেছনে তিন কারণকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর প্রাথমিকভাবে ‘মাছের ঘের নিয়ে বিরোধ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও নিয়োগ সংক্রান্ত এবং রাজনৈতিক বিরোধ’ এই তিনটি বিষয় সামনে উঠে এসেছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদয় শংকরের মা ছবি রাণী বিশ্বাস অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
সোমবার সকালে নিজ বাড়ির সামনে দুবৃর্ত্তদের গুলিতে নিহত হন উদয় শংকর বিশ্বাস। তিনি মণিরামপুর উপজেলার পাঁচাকড়ি গ্রামের রণজিৎ বিশ্বাসের ছেলে। উদয় শংকর নেহালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। একই সাথে তিনি উপজেলার নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংস্কৃতি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং টেকারঘাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং পাঁচাকড়ি গ্রামের বৈকালী সর্বজনীন পূজা মণ্ডপের সভাপতি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি গ্রামের বৈকালী মোড়ে নিজ বাড়ির সামনে দুর্বত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের পর প্রাথমিকভাবে ‘মাছের ঘের নিয়ে বিরোধ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও নিয়োগ সংক্রান্ত এবং রাজনৈতিক বিরোধ’ এই তিনটি বিষয় সামনে উঠে এসেছে। মাছের ঘের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল উদয়ের। তাই পূর্বের শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পাশাপাশি টেকেরঘাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও সম্প্রতি তিন কর্মচারী নিয়োগ এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তাকে হত্যা করেছে কি না— সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা ‘মাছের ঘের, স্কুল অথবা রাজনীতি’ এই তিন কারণে উদয়কে হত্যা করা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এই তিন কারণকে সামনে রেখেই হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনে তদন্ত করছে পুলিশ।
স্থানীয় নেহালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক পবিত্র বিশ্বাসের সঙ্গে উদয়ের রাজনীতিক ও পারিবারিক বিরোধ ছিলো। উদয় যে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, তার আগে সভাপতি ছিলো পবিত্র। এছাড়া পাঁচাকড়ি গ্রামের বৈকালী সর্বজনীন পূজা মণ্ডপের সভাপতিও উদয়। এর আগে সভাপতি ছিলো পবিত্র। পাশাপাশি একটি মাছের ঘের নিয়েও পবিত্র’র সাথে উদয়ের বিরোধ ছিলো। বিদ্যালয়ে এর আগে তিনটি নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো।
হত্যাকাণ্ডের দিন প্রধান শিক্ষক ও পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগের আবেদন ফরম জমা দেওয়ার কথা ছিলো। সবমিলিয়ে ব্যক্তিগত ও পূর্বের শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করছি।
নিহতের স্ত্রী অনিন্দিতা বিশ্বাস বলেন, স্কুলের কমিটি ও মন্দিরের কমিটি হওয়ার পরে থেকে উদয় আতংকে ছিলো। এই বিষয়ে থানাতে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন উদয়। শেষমেষ তাকে জীবন দিতেই হলো।
এদিকে, উদয় শংকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার রাত ১১টার দিকে তার মা ছবি রাণী বিশ্বাস অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মণিরামপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে আসামিদের নাম—পরিচয় দেয়া হয়নি। তবে এজাহারের বর্ণনায় যাদের সাথে উদয় শংকরের বিরোধ ছিল তাদের চার জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন, একই গ্রামের পবিত্র বিশ্বাস, পরিতোষ বিশ্বাস, সুভাষ বিশ্বাস ও উত্তম বিশ্বাস।
পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে এদের মধ্যে দু’জনকে মঙ্গলবার ভোরে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন, পাঁচাকড়ি গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাস ও উত্তম বিশ্বাস।
মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, উদয় শংকর বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার মা ছবি রাণী বিশ্বাস মামলা করেছেন। মামলার এজাহারের বর্ণনায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, কি কারণে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে স্কুলের নিয়োগ, মাছের ঘের নিয়ে বিরোধ বা রাজনৈতিক কারণে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। দ্রুতই এ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।