ঝিকরগাছা পৌর প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছায় মৃত স্কুলছাত্রী অনি রায়ের (১৩) মরদেহ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে গ্রামবাসী ও সহপাঠীরা। ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরের দিকে ঝিকরগাছায় এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
অনি রায় ঝিকরগাছা পৌর সদরের মিস্ত্রীপাড়া এলাকার প্রবাসী গৌতম রায়ের মেয়ে ও ঝিকরগাছা বি.এম হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে সোমবার সে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে বলে পরিবারের অভিযোগ।
জানা যায়, সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্কুলের কোচিং থেকে ফিরে ঝিকরগাছা বি.এম হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনি রায় (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
মঙ্গলবার হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বজনরা অনি রায়ের লাশ নিয়ে ঝিকরগাছায় পৌঁছালে লাশ কাঁধে নিয়ে ঝিকরগাছা হাসপাতাল মোড় থেকে উপজেলা মোড় পর্যন্ত মিছিল নিয়ে যায় এলাকাবাসী। মিছিল থেকে অনি রায়কে উত্ত্যক্তকারী বখাটেদের বিচার দাবি করা হয়। পরে উপজেলা মোড়ে মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান নেন তারা। এতে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরে ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত এসে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা সড়ক ছেড়ে দেয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহতের ভাই অর্ঘ্য রায় জানান, প্রতিদিনের মত তার বোন স্কুলে কোচিং এর জন্য যায়। কোচিং থেকে ফিরে কাউকে কিছু না বলেই নিজের ঘরে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে ঘরের দরজা ও ভেন্টিলেটর ভেঙে তাকে উদ্ধার করা হয়। অর্ঘ্য দাবি করেন, তার বোন স্কুল থেকে ফেরার পথে কিছু বখাটে তাকে উত্ত্যক্ত করে। তার বোনের মরদেহ হাসপাতালে নেয়ার পরে অর্ঘ্যের সাথে তিন যুবকের ঝগড়া বাঁধে।
তার দাবি ওই তিন যুবকই অনি রায়কে উত্ত্যক্ত করতো। তাদের মধ্যে একজন হাসপাতাল রোড এলাকার সাকিব। সেও বি.এম হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। পরে স্কুলের গেটের একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ওই তিন যুবক স্কুলে ঢোকার দশ মিনিট পরে নিহত অনি রায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বের হচ্ছে। অন্য একটি ফুটেজে দেখা যায় অনি রায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী উর্মি নামের এক মেয়ে জানান, নিহত অনি অনেক জোরে জোরে দৌড়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো আর তিনটা ছেলে তার পিছু নিয়েছিল।
নিহতের ভাই অর্ঘ্য রায় দাবি করেন, স্কুলের ভিতরে অনি রায়ের হেনস্থার ঘটনা ঘটতে পারে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি সেটা দেখাতে ও দিতে অস্বীকৃতি জানান।
ঝিকরগাছা বি.এম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, অনি রায় খুবই ভাল মেয়ে, খেলাধুলার কারণে পরিচিত মুখ ছিল। অনি রায় স্কুলে কোচিং করতে এসেছিল। স্কুল থেকে সে স্বাভাবিকভাবে বের হয়েছে। এরপর বাসায় ফিরে আত্মহত্যা করে। পথে কি হয়েছে সেটি এখনও জানা যায়নি।
তবে উত্ত্যক্তের যে অভিযোগ এসেছে এবং সন্দেহভাজন যে নামগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ঘটনা তদন্ত করছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। ফলে অনির মৃত্যুর পেছনে যাই থাকুক তা বের হয়ে আসবে। এছাড়া অনির মৃত্যুর ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত ও শাস্তির দাবিতে বুধবার স্কুলের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে।
ঝিকরগাছা থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা এএসআই রুমা রায় জানান, মঙ্গলবা অনি রায়ের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। নিহতের ভাই একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাতদন্ত করছে।
ঝিকরগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত জানান, তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হবে।