১৬ই জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উচ্চ রক্তচাপ কেন হয় নিয়ন্ত্রণে রাখবেন যেভাবে
উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়? নিয়ন্ত্রণে রাখবেন যেভাবে

উচ্চ রক্তচাপ এক অসংক্রামক নীরব ঘাতক। সারা পৃথিবীজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো হৃদরোগ ও রক্তনালির সমস্যাজনিত বিবিধ রোগ। আর এসব সমস্যার পেছনে প্রধানত দায়ী হলো উচ্চ রক্তচাপ।

ভয়াবহ তথ্য হলো, বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ ব্যক্তিই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। হৃদপিণ্ড বিকল, কিডনি বিকল আর স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ এই উচ্চ রক্তচাপ। তবে চিন্তার বিষয় এই যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগী জানেনই না যে তিনি এ রোগে ভুগছেন।

এর প্রধান কারণ হলো সচেতনতার অভাব। এছাড়া প্রথম দিকে বেশির ভাগ রোগীরই উচ্চ রক্তচাপের কারণে তেমন কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। এটিও উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা করার একটি বড় কারণ।

বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে, রোগী অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে বা হাসপাতালে গেলে ধরা পড়ে যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। এ জন্য বয়স ৪০ বছর পেরোলে সবারই বছরে অন্তত একবার হলেও রক্তচাপ মাপা জরুরি।

আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, আজকাল তুলনামূলক অনেক কম বয়সেই উচ্চ রক্তচাপ দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো মন্দ খাদ্যাভ্যাস, ওজন বৃদ্ধি আর কায়িক শ্রমের অভাব। এখনকার শিশু-কিশোরেরা ছোটবেলা থেকেই উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রিফাইন্ড খাবার গ্রহণ করে।

তাদের খেলাধুলা ও ছোটাছুটির জগতও সংকীর্ণ যা ঘরে মুঠোফোনে বা কম্পিউটারের পর্দায় সীমিত হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া বেড়েছে মানুষের মানসিক চাপ বা স্ট্রেস। তাই অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ।

যদি পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ অথবা হাইপারলিপিডিমিয়ার ইতিহাস থাকে, যদি কেউ ওজনাধিক্য বা স্থূলতায় আক্রান্ত হন বা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, ধূমপান বা মদ্যপান করেন তবে অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপের বিষয়ে সাবধান থাকবেন।

এর বাইরে যখনই যে কোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যাবেন কিংবা যখনই সুযোগ হবে, তখনই রক্তচাপ মাপুন। চাকরিতে প্রবেশ করলে বাৎসরিক চেকআপ বা প্রতিবেদনের সময় রক্তচাপ মাপুন। অর্থাৎ নিজের রক্তচাপের দিকে সতর্ক নজর রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
রক্তচাপ বেশি পাওয়া গেলে প্রথমেই জীবনাচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। লবণ কম খেতে হবে, পাতে আলাদা লবণ একদম খাওয়া চলবে না। ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে ফেলতে হবে। উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।

বেশি করে টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। কায়িক শ্রম বাড়াতে হবে। দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটা ভালো। জীবনযাপনে এতটুকু পরিবর্তন আনলেই রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে, তাই ওষুধের প্রতি অনেকেরই প্রথমে অনীহা থাকে।

কারো শুরুতেই অনেক বেশি রক্তচাপ থাকলে আর জীবনাচরণ পরিবর্তনের পরও রক্তচাপ বেশি পাওয়া গেলে অবশ্যই ওষুধ খাওয়া উচিত। অনেকে রক্তচাপ স্বাভাবিক হলে ওষুধ বন্ধ করে দেন বা অনিয়মিতভাবে খান। এটাও ঠিক না। ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই রক্তচাপ মাপলে তা স্বাভাবিকই পাওয়া যাবে।

তার মানে এই নয় যে, ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যাবে। রক্তচাপ বেশি নেমে গেলে বা ওঠানামা করলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা যাবে বা প্রয়োজনে ওষুধ পরিবর্তন করা যাবে।
বে কখনোই নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। সবার সম্মিলিত সচেতনতাই পারে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টিকারী এই উচ্চ রক্তচাপের মত রোগকে রুখে দিয়ে সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে।

লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার (মেডিসিন), খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram