২রা ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ইসলামে নারীর সম্মান
বার পঠিত

বিলাল হোসেন মাহিনী : ইসলাম নারীকে দিয়েছে স্থান—কাল—পাত্র নির্বিশেষে অসম্মান ও মর্যাদা। এ নারীই আমাদের মমতাময়ী মা, প্রিয়তমা স্ত্রী, স্নেহের বোন বা আদরের সোনামণি মেয়ে। অন্যদিকে এ স্বর্গতুল্য মাকে কোনো কোনো সময় ও অবস্থায় চরম অপমানকর চরিত্রে উপস্থাপন করা হয় এ সমাজে। অথচ ইসলাম নারীকে দিয়েছে মায়ের সম্মান, স্ত্রীর অধিকার ও কন্যার স্নেহ।

একজন নারী ‘মা’ হিসাবে শুধু বাবার চেয়ে অধিকারে বড়ই নন, মর্যাদা ও সম্মানেও শ্রেষ্ঠ। বিশ্বনবি (সা.) কে একবার একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করেছিলেন, জীবিত বাবা—মার মধ্যে সেবা পাওয়ার অধিক হকদার কে? মহানবি (সা.) ৩ বার বলেন, তোমার ‘মা’। এরপর চতুর্থবারে বলেন তোমার পিতা। তাছাড়া আমাদের দেশের মুসলিম পারিবারিক আইনে একজন নারী তার পিতা—মাতা, স্বামী, সন্তানসহ আরও অনেকের কাছ থেকে সম্পত্তির অংশ পেয়ে থাকেন।

ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে পৃথিবীর প্রথম নারী হলেন হজরত আদম (আ.)—এর স্ত্রী হাওয়া (আ.)। মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতেই পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতেই একই দিনে একই সঙ্গে দুনিয়াতে নর ও নারীর আবির্ভাব ঘটান।

এ ধরণির সব কিছুই তাই নর—নারী উভয়ের কষ্টার্জিত ফসল বৈকি! জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘নারী’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কবিতাটি তিনি শেষ করেছিলেন এভাবে, ‘সেদিন সুদূর নয়, যেদিন ধরণি পুরুষের সঙ্গে গাহিবে নারীরও জয়!’ কিন্তু সে ‘সুদূর নয়’ যে আসলে কত দূর, তা আজও আমাদের অজানা। আজও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, স্বীকৃতিবিহীন নারীর শ্রম, পারিবারিক সহিংসতা, অর্থ—সম্পত্তির ওপর নারীর নিয়ন্ত্রণহীনতার বিষয়গুলো নারীর ক্ষমতায়িত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্রমাগত ব্যাহত করে চলেছে।

ইসলামি শরিয়তের আদেশ, নিষেধ ও বাধ্যবাধকতা নারী—পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত যাবতীয় নির্দেশাবলি দাওয়াত কর্মবিষয়ক হোক কিংবা শিক্ষামূলক, আন্দোলনধর্মী হোক কিংবা উপদেশমূলক বরং সর্ববিষয়ক নির্দেশাবলির দ্বারাই উদ্দেশ্য করা হয়েছে নারী—পুরুষ উভয়কে সমানভাবে।

আরও পড়তে পারেন : “মাতা—পিতা বেহেশত এবং মাতা—পিতা দোযখ”

পবিত্র কুরআনের সূরা নাহলের ৯৭নং আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম সম্পাদন করবে, নিশ্চয় আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব এবং তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দান করব।’

নারীদের শিক্ষা—দীক্ষার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ মহানবি (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর—নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।’ (ইবনে মাযাহ শরিফ)।

মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ’ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী—পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৭নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণ স্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’

বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারি ও মুসলিম)। ইসলামি জীবন দর্শনের প্রতিটি পর্বে দৃষ্টিপাত করলে সুস্পষ্টভাবে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা হচ্ছে প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার।

ইসলামে বিবাহের দেনমোহরের ক্ষেত্রে নারীর অধিকারের বিপরীতে রয়েছে পুরুষের ন্যায়সঙ্গতভাবে আনুগত্য পাওয়ার অধিকার। অনুরূপভাবে নারী তার সতীত্ব রক্ষা করবে মর্মে পুরুষের যে অধিকার তার বিপরীতে রয়েছে পুরুষের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব। সন্তান লালন—পালনে নারীর দায়িত্বের বিপরীতে রয়েছে পুরুষের পরিবারের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব।

হ্যাঁ, সন্তান লালন—পালন ও শিক্ষাদান ইত্যাদি বিষয়ে পুরুষেরও দায়দায়িত্ব রয়েছে ঠিক, তবে সেটি নারীর দায়িত্ব—কর্তব্যের তুলনায় কম। এ ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ অধিকার ও দায়িত্ব আদায় নিশ্চিত করার মাধ্যমেই মূলত জীবনে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকবে।

পরিশেষে বলতে চাই, ইসলাম নারীকে দিয়েছে নানাবিধ সামাজিক অধিকার। তাই নারীর মাথা উঁচু করে বাঁচার মতো উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাটাই রাষ্ট্র ও সমাজের—সবার চাওয়া হওয়া উচিত।

লেখক : প্রভাষক, গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদ্রাসা, যশোর
সৌজন্যে : যুগান্তর

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
Fri Sat Sun Mon Tue Wed Thu
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram