সমাজের কথা ডেস্ক : আষাঢ়—শ্রাবণের পর কয়েক দিন বড় আকারের ইলিশ নিয়ে ফিরেছিলেন উপকূলীয় বরগুনার জেলেরা। তবে এখন ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিনের মাঝামাঝি; সাগর ও নদীতে পানি বেড়েছে, থেমে—থেমে বৃষ্টিও হচ্ছে। তার পরও ইলিশ বিক্রি করে খরচের টাকা তুলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
কাঙিক্ষত ইলিশ না মেলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। মাছ ধরতে নদী ও সমুদ্রে নামতে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনতে দাদন নেয় এসব পরিবার। তবে এবার সেই টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না তারা।
গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে প্রতিদিন বরগুনার পাথরঘাটায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) ফেরে প্রায় ৪০—৫০ ট্রলার। এর মধ্যে দুই—একটি পর্যাপ্ত মাছ পেয়েছে। বাকিরা ইলিশ ধরে খুশি হতে পারছেন না। ফলে বন্দরের সরগরমেও ভাটা পড়েছে, অলস সময় পারছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মৌসুমের এই সময়ে যে পরিমাণ মাছ আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও কেনা—বেচা নেই।
সমুদ্রগামী কয়েক জেলে জানান, অধিকাংশ ট্রলারে চাহিদামতো ইলিশ ধরা পড়ছে না। অনেক সময় মাছ বিক্রিতে বাজার খরচ ও তেলের টাকাও হয় না। তারা বলেন, আমরা সাগরে যাওয়ার আগে ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে থাকি। মাছ ধরা না পড়ায় এখন ওই টাকাও ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না।
কয়েকজন মাঝি জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতে কয়েক দিন ছোট সাইজের ইলিশ ধরা পড়ে। পরে কিছু দিন বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়েছিল। এখন মৌসুম শেষের পথে, পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও, পড়ছে খুবই সামান্য। এ ছাড়া কয়েক দিন পর পর আবহাওয়া খারাপ থাকায় গভীর সমুদ্রেও যেতে পারছেন না তারা।
বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও নদীতে নিষিদ্ধ বেহুন্দী, গড়া, বাঁধা, ঘোপ জাল দিয়ে ছোট মাছ শিকার চলছে বলে অভিযোগ করেন বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। তিনি বলেন, এসব নিষিদ্ধ জাল বন্ধ করা না গেলে ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ুন্ত কুমার অপু বলেন, মনে হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশ ধরা পড়ছে না। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণের উপকূলে পানি দূষিত ও নাব্যতা সংকটের কারণে ইলিশ ধরা না পড়ার কারণ হতে পারে। তবে গভীর সমুদ্রে ইলিশ রয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে উপকূলের নদনদীতে ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বাংলাদেশি জেলেদের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই বলে জানান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহীদুল ইসলাম খালেদ। তিনি বলেন, বিদেশি ফিশিং জাহাজগুলোতে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকে। তারা ওসব যন্ত্র দিয়ে সমুদ্রের তলদেশে কোন জায়গায় মাছ আছে তা নির্ণয়ে করতে পারে। আমাদের দেশের সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোতে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আধুনিকায়ন করতে হবে এবং জেলেদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ইলিশ ধরা না পড়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন— বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, নাব্যতা হ্রাস, বালু উত্তোলন, দূষণ ও মোহনাগুলো অবৈধ জাল দিয়ে ঘিরে রাখা। তবে সামনের পূর্ণিমায় ইলিশ ধরা পড়ার একটি সুযোগ রয়েছে। পূর্ণিমায় নদনদীর পানির উচ্চতা বাড়ে। এ সময়টাতে নদী ও সমুদ্রে ইলিশের পরিমাণ বাড়বে। তখন জেলেদের জালে বেশি ইলিশ ধরা পড়বে।