মুসলমানরা রোজার মাসের শেষ ১০ দিন সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদে যে ধ্যাসে বসেন, তাকে বলে ইতিকাফ। সাধারণত রোজার মাসে ইতিকাফ করা হলেও বিশেষ উদ্দেশ্য বা মানত নিয়ে অন্যসময়ও তা করা যায়।
এই ধ্যানের উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। যিনি ইতিকাফে বসেন, ইবাদতের জন্য তিনি দুনিয়াবি সব কিছু থেকে আলাদা করে নেন।
বায়তুল মোকাররমের জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পবিত্র শবে কদর প্রাপ্তির সুনিশ্চিত প্রত্যাশায় মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নৈকট্য লাভে রোজার শেষ দশকে ইতিফাক ইবাদত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনকে বলা হয় নাজাত দশক। ২০ রোজার পর থেকেই শুরু হয়ে ইতিকাফের ইবাদত।
বাধ্যতামূলক না হলেও রোজার শেষ দশ দিনের স্বেচ্ছা পালনীয় এ ইবাদত ‘খুবই ফজিলতপূর্ণ’ বিবেচনা করা হয়।
ইতিকাফ আরবি ‘আকফ’ ধাতু থেকে গঠিত একটি শব্দ। আকফ শব্দের অর্থ হল অবস্থান করা। ইতিকাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা। ইসলামি পরিভাষায় নির্ধারিত সময়ে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে পার্থিব ও জাগতিক সব ধরনের সংস্পর্শ ত্যাগ করে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়।
ইতিকাফ তিন প্রকার। রোজার শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নত। এর বাইরে যে কোনো সময় নফল ইতিকাফ করা যায়। আর নির্দিষ্ট মানত করে ইতিকাফ করলে তা হয় ওয়াজিব।
বায়তুল মোকাররমের খতিব বলেন, “রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ হল সুন্নতে মুয়াককাদা আলাল কেফায়া। এটি মহল্লার যে কেউ একজন মসজিসে বসে করতে হয়। একজন করলে মহল্লার সবার হয়ে যায়। কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবেন।”
ইতিকাফ করার জন্য মসজিদে যেতে হবে ২০ রোজার সূর্যাস্তের আগে; শাওয়ালের চাঁদ দেখার পর মসজিদ থেকে বের হতে হবে।
তবে মাঝের সময়টায় খাবার আনতে বাইরে যাওয়া যাবে। আর আরাধনায় থাকলেও দ্বীন নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলা যাবে।
নারীদের ক্ষেত্রে ইতিকাফে বসার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসায় কোনো নিদিষ্ট জায়গায় পর্দার আড়ালে ইতিকাফে বসতে পারেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহ্ম্মদ নূর উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে শবে কদরের রাত নিহিত। যেসব রাতের এবাদত হাজার বছর রাতের এবাদতের চেয়ে উত্তম। ইতিকাফ করলে এই রাতের সন্ধান মেলে “
কোরআন শরিফে সুরা বাকারর ১২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং স্মরণ কর যখন আমি কাবাগৃহকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র এবং নিরাপদস্থল করলাম এবং বললাম, ‘মাকামে ইবরাহীমকে সলাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর’ এবং ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে বলেছিলাম, ‘আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকূ ও সাজদাহকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে।”
সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর, আর মাসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় তাদের (স্ত্রী) সাথে সহবাস করো না। এসব আল্লাহর আইন, কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে।”
ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) স্বয়ং ইতিকাফ করেছেন এবং ইতিকাফ করার জন্য সাহাবিদের উৎসাহিত করেছেন।
বোখারি শরিফে বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) প্রতি বছর রমজান মাসে ইতিকাফের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করতেন। কখনো তিনি পুরো রমজান মাস ইতিকাফ করেছেন। একবার বিশেষ কারণে রমজান মাসে ইতিকাফ করতে পারেননি, তাই শাওয়াল মাসে ১০ দিন রোজা রেখে ইতিকাফ করেন (বোখারি: ২০২৯)।
বায়তুল মোকাররমের খতিব রুহুল আমীন বলেন, “ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াবি সব ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যেতে চায়। সেজন্য এ সময় বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করার পাশাপাশি নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার, দোয়া-দরুদ, দান-সদকার মত নফল ইবাদতে মনোযোগী হতে হয়।”
: বিডিনিউজ