নিজস্ব প্রতিবেদক : ইজিবাইক চালক বুলবুল হোসেন হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। যশোর ও সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। একই সাথে আটককৃতদের কাছ থেকে লুট হওয়া ইজিবাইক, হত্যাকাজে ব্যবহৃত গামছা, ওড়না, তিনটি মোবাইল ফোনসেট, জুস ও চেতনা নাশক উদ্ধার করা হয়েছে। বাইকটি ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ৪ মাস পূর্বে যাত্রীবেসে বুলবুলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে আটক এসার আলী। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরো গাড়ো হয়। চক্রের অন্য সদস্যদের সাথেও বুলবুলের পরিচয় হয়।
গতকাল দুপুরে প্রেসব্রিফিংএ হত্যাকাণ্ডের পেছনের এ সব কথা জানিয়েছেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) বেলাল হোসাইন। গতকাল আটককৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে যশোর সদর উপজেলার তেঘরিয়া-নতুনহাট পাবলিক কলেজের পেছনের একটি পাট ক্ষেত থেকে ্ইজিবাইক চালক বুলবুল হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আটককৃতরা হলো, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পুরাখালী গ্রামের আব্দুস সাত্তার গাজীর ছেলে বর্তমান যশোর শহরের শংকরপুর বাবলাতলা শ্বশুর ইউসুফ আলীর বাড়িতে বসবাসকারী এসার আলী (৩১), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে বর্তমান যশোর শহরের শংকরপুর ইসহাক সড়কের মামুনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাহমুদ ওরফে মামুন (৩৮), যশোর শংকরপুর মেডিকেল কলেজপাড়ার শহর আলীর ছেলে শুকুর আলী (২০), শংকরপুর গোলপাতা মসজিদের পশ্চিমপাশে মৃত মকসেদ আলীর ছেলে জুয়েল (৩৮), শংকরপুর জমাদ্দারপাড়ার নুর ইসলামের ছেলে হৃদয় (২৩), সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নয়কাঠি গ্রামের নজরুল ইসলামের দুই ছেলে (২৮) ও ইব্রাহিম গাজী (২৪)।
জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, যশোর শহরতলীর রাজারহাট এলাকার এনামুল হকের একটি ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করে আসছিলেন সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামের মৃত শেখ আব্দুর রশিদের ছেলে বুলবুল হোসেন। চার মাস আগে যাত্রীবেসে তার ইজিবাইকে ওঠে এসার আলী। এরপর থেকে বুলবুলের সাথে এসার আলী প্রায়ই মোবাইলে কথাবার্তা চলতো। এসার আলী সহযোগী শুকুর আলী ও জুয়েলের সাথে বুলবুল সম্পর্কে আলোচনা করে। বুলবুলের ইজিবাইকটি লুণ্ঠনের জন্য এসার আলী, শুকুর আলী, জুয়েল, হৃদয় ও মামুন পরিকল্পনা করে।
গত ৮ জুলাই সকালে এসার আলীর নামে মোবাইল ফোনের নতুন একটি সীম কার্ড ক্রয় করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি ওইদিন সন্ধ্যায় এসার আলী, শুকুর আলী ও জুয়েল একত্রে বুলবুল হোসেনের ইজিবাইকটি ভাড়া নিয়ে বাহাদুরপুর পার্কে যায়। তবে যাওয়ার সময় মণিহার পার হয়ে হৃদয় ও মামুন তাদের সাথে যোগ দেয়। কিন্তু বাহাদুরপুর পার্ক বন্ধ পেয়ে চলে যায় বালিয়া ভেকুটিয়া ভাবীর বড়া খাওয়ার জন্য। ভাবীর বড়া খেয়ে ফেরার পথে একটি দোকান থেকে তিনটি কোমল পানীয় কেনে। একটির মধ্যে ৬টি ঘুমের ওষুধ মেশায়। বিমান বন্দর সড়ক থেকেই ওই কোমল পানীয় প্রথমে আটক হৃদয় পান করে। তবে হৃদয় অনেক আগে থেকেই নেশায় ছিল। সে কারণে হৃদয়ের ওপর কোন প্রভাব পড়েনি।
এরপরই ওই কোমল পানীয় বুলবুল হোসেনকে পান করায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে বুলবুল হোসেন অচেতন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে ফিরে তারা ছুটিপুর রাস্তা হয়ে চলে যায় ঝিকরগাছা। এরমধ্যে তারা বুলবুলকে রাস্তায় ফেলে দেয়ার জন্য জায়গা খুঁজতে থাকে। সুযোগ না পেয়ে যায় তেঘরিয়া নতুনহাট পাবলিক কলেজের পেছনে। আসার পথে বুলবুলকে রাস্তায় না ফেলে হত্যার বিষয়টি চুড়ান্ত করে। নতুনহাট কলেজের পেছনে ইদ্রিস মোল্যার পাট ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে একটি গামছা ও একটি ওড়না দিয়ে বুলবুলের হাত ও পা বেধে ফেলে।
এরপরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। লাশটি ফেলেই ইজিবাইকটি নিয়ে যায় এসার আলী। ওই ইজিবাইক প্রথমে নিয়ে যায় ঝিকরগাছা তার আত্মীয় বাড়িতে। তাদেরকে বলেছে ইজিবাইকটি কেনা হয়েছে। পরদিন নতুন একটি চার্জার কিনে তাতে চার্জ দেয়া হয়। এরপরই এসার আলী ইজিবাইকটি ওই বাড়ির কাউকে কিছু না বলে নিয়ে চলে যায় সাতক্ষীরার দিকে।
বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় এসার আলীর দুই আত্মীয় একটি প্রাভেটকার নিয়ে তার পিছু নেয়। সাতক্ষীরা বিজিবি ক্যাম্পের কাছে পৌছানোর মুহুর্তে প্রাইভেটকার নিয়ে এসার আলীর পেছনে হাজির হয় তার আত্মীয়। পেছন থেকে চোর বলে চিৎকার করলে এসার আলী ইজিবাইক ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই সুযোগে আকবর ও ইব্রাহিম ইজিবাইক নিয়ে চলে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরে।
এদিকে নিখোঁজের ঘটনায় বুলবুলের পরিবার কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দেয়। কিন্তু অভিযোগটি গুরুত্বহীন অবস্থায় থেকে যায়। এরই মধ্যে ১০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ডিবি পুলিশ বুলবুলের লাশ উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় গত সোমবার নিহতের ভাই ফরহাদ হোসেন অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে নিয়ে ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম আসামি এসার আলীর নতুন সেই মোবাইলটির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে বুলবুল হোসেনের হত্যা রহস্য উধঘাটন, হত্যাকারীদের আটক ও হত্যাকাজে ব্যবহৃত ইজিবাইকসহ জিনিসপত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
গতকাল বুধবার আটক সাতজনকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। তারা সকলেই বুলবুল হোসেনকে হত্যার কারণ উল্লেখ পূর্বক আদালতে চারজন বিচারকের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর তাদের প্রত্যেককে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন বিচারক।