বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি: কৃষকদের উৎপাদিত ভুট্টা সহজ পদ্ধতিতে এবং বিনা মূল্যে মাড়াইয়ের জন্য দুই বছর আগে সরকারি টাকায় কেনা হয়েছিল ১২টি মাড়াই যন্ত্র। কিন্তু বেশির ভাগ প্রকৃত ভুট্টাচাষিরা সরকারি ভুট্টামাড়াই যন্ত্রের খবর জানে না। ফলে ভুট্টামাড়াই যন্ত্রগুলো ভুট্টাচাষিদের তেমন কোনো কাজে আসছে না। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বেশির ভাগ মাড়াই যন্ত্র।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় নয়টি ইউনিয়ন। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে দুটি করে মোট ১২টি ভুট্টামাড়াই যন্ত্র কেনা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার সহায়তার প্রকল্পের (এলজিএসপি-৩) আওতায় প্রতি দুটি মাড়াই যন্ত্র ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা করে মোট ১০টি যন্ত্র ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় এবং একটি ইউনিয়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় দুটি মাড়াই যন্ত্র ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কেনা হয়। মাড়াই যন্ত্রগুলো ইউনিয়ন পরিষদে এনে রাখা হয়। কেনার পর থেকে বেশির ভাগ মাড়াই যন্ত্র সেভাবেই পড়ে আছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মাড়াই যন্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দরাজহাট ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবনের মধ্যে দুটি মাড়াই যন্ত্র পড়ে আছে। আর ধলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পলিথিন দিয়ে ঢাকা রয়েছে দুটি মাড়াই যন্ত্র। বাসুয়াড়ী ইউনিয়ন পরিষদের দুটি মাড়াই যন্ত্র রয়েছে।
উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের আগড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ এবার দুই বিঘা (৫২ শতকে বিঘা) জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। আর কয়েক দিন পর তিনি ক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলবেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে একবার আমি ভুট্টার চাষ করেছিলাম। সেবার প্রতি বিঘা ১ হাজার ২০০ টাকায় ভুট্টা মাড়াই করেছিলাম। ভাড়া ছাড়াই সরকারি মেশিনে ভুট্টা মাড়াই করা যায়, আপনার কাছে শুনলাম। এটা হলে তো খুব ভালো হয়। মেশিনের ব্যাপারে ইউনিয়ন কাউন্সিলে গিয়ে খোঁজ নেব।’
বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম গত বছর এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। স্থানীয়ভাবে তিনি ওই ভুট্টা মাড়াই করেছিলেন। এ বছর তিনি কোনো ভুট্টার চাষ করেননি। কিন্তু কয়েক মাস আগে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ভুট্টামাড়াই যন্ত্র বাড়িতে এনে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এবার গমের চাষ করেছি। ভেবেছিলাম, মেশিনটি দিয়ে গম মাড়াই করব। ১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ করে মেশিনটি মেরামত করেছি। কিন্তু মেশিনটি পুনরায় নষ্ট হয়ে গেছে।’
দরাজহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, গত বছর ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ হয়নি। এ জন্য ভুট্টামাড়াই যন্ত্র দুটি পড়ে ছিল। এবার ভুট্টার চাষ হয়েছে। একজন কৃষক ভুট্টা মাড়াইয়ের জন্য একটি যন্ত্র নিয়ে গেছেন।
ধলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ভুট্টামাড়াই যন্ত্র দুটি কাজে আসছে না। কৃষক ভুট্টা মাড়াই করতে যন্ত্র দুটি নিচ্ছেন না। যন্ত্র দুটি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা আছে। সম্প্রতি ঝড়ে পলিথিন ছিঁড়ে উড়ে গেছে। দ্রুত মাড়াই যন্ত্র দুটি সরিয়ে ভালো জায়গায় রাখা হবে।
বাসুয়াড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান সরদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্র দুটি ইউনিয়ন পরিষদে পড়ে ছিল। একটি যন্ত্রের চাকার টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে। দুজন কৃষক যন্ত্র দুটি নিয়ে গেছেন। তাঁদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, ভুট্টা চাষের মূল সমস্যা মাড়াই করা। মাড়াই যন্ত্রগুলো কেনার ফলে উপজেলায় ভুট্টা চাষ বেড়েছে। মাড়াই যন্ত্রগুলো ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাঠ দিবস ও কৃষক সমাবেশগুলোয় ভুট্টাচাষিদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাড়াই যন্ত্র নিয়ে ভুট্টা মাড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করি। উপজেলায় এবার ৩৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে।