বিশেষ প্রতিনিধি : ডেঙ্গু প্রজননের উর্বরক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত কালেক্টরেট চত্বরে রক্ষিত ‘আলামতের জঞ্জাল’ সহসা সরছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরানো জরুরি হলেও আইনের জটিলতায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। এমনকি ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে করণীয় সভায় এ বিষয়ে খুবই সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে। অথচ মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিতের পর দীর্ঘদিনের এ জঞ্জাল সরবে এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
যশোর কালেক্টরেট চত্বরে যুগের পর যুগ জড়ো হওয়া আলামতের সংখ্যা ২২ হাজার ৬৩২টি। এর সিংহভাগই যানবাহন। এসকল যানবাহনের কোনটিই আর সচল উপযোগী নেই। গতকাল রোববার ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করণীয় শীর্ষক সভায় জানানো হয়, এসব আলামতের কারণে সংশ্লিষ্ট স্থান ডেঙ্গুরোগবাহিত এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র লার্ভা উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হলেও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো উদ্যোগ এই মুহূর্তে গৃহীত হচ্ছে না। সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। মামলার জটিলতার কথা উল্লেখ করে সভায় বিষয়টি এক প্রকার এড়িয়ে যাওয়া হয়। ফলে জঞ্জাল সরানোর যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল তা সম্ভব না তে রূপ নিচ্ছে।
গতকাল রোববার যশোর জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে অনুষ্ঠিত এ সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের গৃহীত ও নির্দেশিত বিভিন্ন বিষয় উত্থাপিত ও বিস্তারিত আলোচিত হয়। এ সময় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কালেক্টরেট মালখানায় রক্ষিত আলামতের সংখ্যা জানানো হয়, সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে সকল স্থান পরিচ্ছন্ন রাখাসহ পরিষ্কারকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু কীভাবে এসব আলামতের প্রাইভেটকার, ভ্যান, রিকসা, মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন, ট্রাক, জিপগাড়িসহ অসংখ্য আলামত সরিয়ে পরিচ্ছন্নতা আনা সম্ভব বা এই জঞ্জাল সরাতে কী কী করণীয় তার কোনো কিছুই আলোচিত হয়নি।
গত সপ্তাহে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কালেক্টরেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওইসব গাড়ি ও যন্ত্রাংশ রাখা স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। সেখানে মশার প্রজনন ক্ষেত্র পাওয়ায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এক প্রকার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পরে ওই স্থান থেকে ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করেছে যশোর পৌরসভা এবং নিয়মিত মশা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানো, লার্ভা উৎপাদন রুখতে স্প্রে করা, ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ও ওষুধ ছড়ানোর কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষ আশা করেছিল গতকালের সভায় আদালতের মালখানার আলামত সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই হয়নি।
ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করণীয় শীর্ষক সভায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জেলা কালেক্টরেট চত্বর ও আদালতের বারান্দায় ২২ হাজার ৬৩২টি আলামত হিসেবে বিভিন্ন প্রকার গাড়ি ও যন্ত্রাংশ রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দৈনিক সমাজের কথাকে জানান, প্রাথমিক বিষয়টি জানা হলো। এটি একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া এবং সম্পূর্ণ জেলা প্রশাকেরও এখতিয়ারের নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আগামীতে আলোচিত ও সরানোর বিষয়ে পথ খোঁজা যেতে পারে। বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত।
গতকালের সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা বাড়ানো, সচেতনতা বৃদ্ধিকরাসহ নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে সপ্তাহের কর্মদিবসের শুরুতে প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল প্রকার অফিস-আদালতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আজ সোমবার শহরে বিশাল র্যালি করা হবে। উপজেলা, ইউনিয়নসহ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে বাসাবাড়িতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলে, সবাই মশারির মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাস করে, পানিবদ্ধ না থাকে কোনো স্থানে। তাছাড়া প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ইবাদত ও প্রার্থনার আগে উপস্থিত সবাইকে ডেঙ্গু সচেতন করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনে আলাদা সেশন পরিচালনা করে শিক্ষার্থী ও তাদের মাধ্যমে অভিভাকদেরকে সচেতন করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস, ডিডিএলজি মো. রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম শাহীন, ৪৯ বিজিবির সহকারী পরিচালক মেজর মো. সেলিমুজ্জামান, র্যাব-৬ এর যশোর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. সাকিব হোসেন, জেলা পিপি অ্যাড. মো. ইদ্রিস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন, গণপূর্ত বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খাতুন প্রমুখ।