সাইফুল ইসলাম: যশোরে শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘণ কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। গতকাল বুধবার সারাদিনে সূর্যের কোনো দেখা মিলিনি। রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ বাইরে বের হয়নি। তবে সবচেয়ে কষ্টে ছিল শ্রমজীবী মানুষ ও শিশু শিক্ষার্থীরা। এদিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে ও শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
শীতে কষ্টে আছেন খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে অনেককে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে এ বছর দরিদ্র অসহায় ছিন্নমূলদের জন্য ৬১ হাজার কম্বল বরাদ্দ ছিলো যার ৫৫ হাজার কম্বল ইতোমধ্যে উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর শীত বস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম এ বছর শুরু হয়নি বললেই চলে। জেলায় তেমন কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল বা দরিদ্রদের জন্য কম্বল বিতরণ করতে দেখা যায়নি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
প্রচন্ড শীতের মাঝেও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকা সন্ধানের চেষ্টা করছেন। কথা হয়, ইজিবাইক চালক শহরের ধর্মতলা এলাকার আব্দুল আলীমের সাথে। তিনি বলেন, ‘আজ সকাল থেকে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে ইজিবাইক চালাতে কষ্টর হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্য বছর বিভিন্ন সংগঠনের থেকে কম্বল পেলেও এ বছর তিনি কোনো কম্বল পায়নি।’
রিক্সা চালক রমজাল আলী বলেন, ‘এ শীতে হাত—পা সব কালা হয়ে যাচ্ছে । রিক্সার হ্যান্ডেল ধরে রাখা যাচ্ছে না। গতকালের চেয়ে আজ বাইরে লোকজন কম হওয়ায় ভাড়া পাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, শীত নিবারণের জন্য পর্যাপ্ত কাপড় না থাকায় আগুন পোহায়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আহসান আব্দুল¬াহ লাবিন বলেন, ‘শীতে বাইরে চলাচল করা যাচ্ছে না। তারপরও শোনা যাচ্ছে আবার বৃষ্টি হবে। জনজীবন বিচ্ছিন্ন হওয়ার মত একটা অবস্থা বিরাজ করছে। এরপরেও আমাদের কোচিং প্রাইভেট চালু আছে তাই বাধ্য হয়ে বাইরে বেরিয়েছি।’
জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব রহমান জানায়, ‘শীতের কারণে স্কুলে যাওয়ার সময় খুবই কষ্ট হয়েছে।’
পথচারী ওহাব রহমান বলেন, ‘শীতের মধ্যেও খুব দরকার হওয়ায় শহরে আসা। শীত আমাদের মত বয়স্কদের জন্য কষ্টদায়ক। ঠাণ্ডা থেকে মুক্তির জন্য আল¬াহর কাছে পানহা চাইতে হবে।’
মৌমিতা বিশ্বাস বলেন, ‘সকাল ৭ টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। এ সময় রাস্তাঘাটের কোনো কিছু দেখা যাচ্ছিলো না চলাচল করা কষ্টকর, তবুও চাকরি উপায় নেই।’
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, জেলার অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ৬১ হাজার কম্বল বরাদ্দ ছিলো তার মধ্যে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ হয়েছে। এছাড়াও আরও ৭৫ হাজার কম্বলের চাহিদার কথা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।