সমাজের কথা ডেস্ক : গাজা শহরের সব বাসিন্দাকে বের হয়ে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাসিন্দাদের বের হয়ে যেতে গাজা সিটিতে হাজার হাজার লিফলেট ফেলেছে তারা। বুধবার লিফলেটে ‘গাজা শহরের প্রত্যেককে’ সম্বোধন করে শহর থেকে আরও দক্ষিণে নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানলে শহুরে এলাকা ‘একটি বিপজ্জনক যুদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হবে। তাই দ্রুত শহর ছাড়তে হবে।’ খবর আল জাজিরার।
এর আগে ২৭ জুন শহরের একটি অংশ থেকে বাসিন্দাদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। তবে বুধবার আকাশ থেকে ফেলা লিফলেটগুলোতে বলা হয়েছে, বাসিন্দারা ‘দ্রুত এবং পরিদর্শন ছাড়াই গাজা সিটি থেকে দেইর আল-বালাহ এবং আল-জাওইয়াতে আশ্রয়কেন্দ্রে’ দুটি নিরাপদ সড়ক বেছে নিতে সক্ষম হবে।
ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলা এমন দুটি লিফলেট তুলে নিয়ে আহমেদ আশরাফ এবং মোহাম্মদ আবু নাসিম নামে দুই যুবক বলেন, এই ৩০০ দিনের নিপীড়নের পর আমরা আর কোথায় যাব? ইসরায়েলি বাহিনীদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, তোমরা কি আমাদের দক্ষিণের দিকে যেতে নির্দেশ করছ?
জাতিসংঘ ইসরায়েলের এই আদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের এমন অঞ্চলে যেতে বলেছে যেখানে যুদ্ধ চলছে।
এদিকে ফিলিস্তিন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের সেক্রেটারি-জেনারেল মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরের পুরো জনসংখ্যাকে "জাতিগতভাবে নিধন" করার চেষ্টা করছে। তারা কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের শহর এবং তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। নেতানিয়াহুর সরকার গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূলের মূল লক্ষ্য থেকে এখনও সরে যায়নি। আর এ কারণে তারা এসব লিফলেট ফেলে তাদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করছে।
গত সপ্তাহে, জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত বলেছেন, যে অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এদিকে বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২০৮ জন। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর থেকে থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৯৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন ৮৮ হাজার ২৪১ জন।
তবে চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের দাবি, ফিলিস্তিনের গাজায় ৯ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এক চিঠিতে সতর্ক করে দিয়ে ল্যানসেটের বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহত ব্যক্তির যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, সম্ভবত সেটি নাটকীয়ভাবে কম। ইসরায়েলি হামলায় এ উপত্যকার বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজারো মানুষ এবং খাবার, চিকিৎসাসেবা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সংকটে পরোক্ষভাবে যে বহু মানুষ মারা গেছে, তাদের ওই হিসাবে বিবেচনায় আনা হয়নি।
অপরদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছেছে। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করার জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।
ইসরায়েল এবং গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে ডেনিয়েল লেভি নামে একজন সাবেক ইসরায়েলি শান্তি আলোচনাকারী বলেন, বর্তমানে টেবিলে থাকা যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি যেভাবে গঠন করা হয়েছে তা যুদ্ধের অবসানের পথ প্রশস্ত করতে পারে, তবে সেই চুক্তিতে যেটি অনুপস্থিত; তা হলো ইসরায়েলের নেতৃত্বের একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি।
কিন্তু এমন অবস্থাতেই নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে হাস্যকর দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় যেকোনো যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার সুযোগ থাকতে হবে।
রবিবার শেষ রাতে তিন ধাপের মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে নেতানিয়াহুর একটি বৈঠক করার কথা ছিল। মে মাসে এ পরিকল্পনাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উপস্থাপন করেন। এতে কাতার ও মিসর মধ্যস্থতা করছে। এটির লক্ষ্য যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং গাজায় আটক থাকা প্রায় ১২০ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এই পরিকল্পনার একটি মূল অংশ মেনে নেওয়ার পাঁচ দিন পর গোষ্ঠীটির দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বশেষ প্রস্তাবের বিষয়ে ইসরায়েলের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
একটি হামাস সূত্র শনিবার রয়টার্সকে জানায়, সমঝোতার শর্ত হিসেবে ইসরায়েলকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে সরে এসেছে হামাস। এর পরিবর্তে তারা ছয় সপ্তাহের প্রথম পর্যায়জুড়ে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনের প্রস্তাব দিয়েছে।