১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আভিজাত্যের ল্যান্ডফোন এখন উটকো ঝামেলা!

সমাজের কথা ডেস্ক : কারও বাড়িতে একসময় ল্যান্ডফোন থাকাটা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। সেই আভিজাত্য এখন শুধুই অতীত। কারণ সময় যত গড়াচ্ছে, ততই কমে যাচ্ছে ল্যান্ডফোনের চাহিদা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বাসায় ল্যান্ডফোন রাখাটা বরং অনেকে এখন উটকো ঝামেলা বলে মনে করেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ল্যান্ডফোনের কলরেট সর্বনিম্ন। এর পরও যত দিন যাচ্ছে, বিটিসিএলের এই ল্যান্ডফোন ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা তত বাড়ছে। এর নেপথ্যে সেলফোন প্রযুক্তির প্রভাব যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিটিসিএলের সেবার মান দিন দিন হ্রাস পাওয়া। বাধ্য হয়েই গ্রাহকরা তাই ল্যান্ডফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

বিটিসিএলের তথ্যানুযায়ী গ্রাহক আকৃষ্ট করতে মাসিক লাইন রেন্ট তুলে দিয়ে ১৫০ টাকায় পুরো মাস ইচ্ছেমতো কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে কোম্পানিটি। ভ্যাটসহ মাসে প্রায় ১৭৫ টাকা দিতে হয় গ্রাহকদের। বিনিময়ে তারা ইচ্ছামতো যে কোনো বিটিসিএল নম্বরে কথা বলতে পারেন। তবে মোবাইল ফোনে কথা বলতে হলে অবশ্য মিনিটপ্রতি ৫২ পয়সা দিতে হয়।

বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অফিসের যে কোনো তথ্য আদান—প্রদানে তারা এখন মোবাইল ফোন ব্যবহারেই অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একটা সময় অফিস—আদালতে জরুরি বার্তা আদান—প্রদানে ল্যান্ডফোনের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন বলেও জানান তারা। বলেন, সেই নির্ভরশীলতা এখন অনেকটাই কমে গেছে।

নিয়াজ মোর্শেদ নামের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, অফিসে টিঅ্যান্ডটি লাইন (বিটিসিএলের ল্যান্ডফোন) থাকলেও সেটি এখন খুব একটা ব্যবহার হয় না। সহকর্মীদের কিংবা অফিসের অন্য কারও সঙ্গে আলাপ করতে মাঝে—মধ্যে ইন্টারকম ব্যবহার করি। এ ছাড়া সবসময়ই মোবাইল ফোনে কথা বলি। ল্যান্ডফোন এখন অনেকটাই অকেজো বলা চলে।

একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকেও ল্যান্ডফোনের ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে। বছর কয়েক আগেও টেলিফোনের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল সবারই; কিন্তু এখন মোবাইলেই যাবতীয় যোগাযোগ হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি ব্যাংক এখন মোবাইলে ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার কারণে গ্রাহকের সঙ্গে সেভাবেই সমন্বয় করছে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রধান শাখার কর্মকর্তাদের যোগাযোগও মোবাইল ফোনেই বেশি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, সেলফোন প্রযুক্তির প্রভাবে ল্যান্ডফোন ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে। আরেকটি কারণ হচ্ছেÑ সরকারি এই সংস্থার সেবায় গ্রাহক তুষ্ট নন। কোথাও দেখা গেল একটি বাড়ির লাইন কেটে বা ছিঁড়ে গেছে; কিন্তু ওই গ্রাহককে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির দ্বারা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া একটি মোবাইল ফোন সংযোগ দিয়ে যেসব ফিচার—সুবিধা পাওয়া যায়, তার পর শুধুই কথা বলার জন্য কে ল্যান্ডফোন ব্যবহার করবে!

বিটিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল মাহমুদ মনে করেন, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ায় মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনই ব্যবহার করে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আজকাল মোবাইল—ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষের শুধু কথা বলাই সহজ হয়নি; হয়েছে একে অপরকে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখার সুযোগও। এ কারণেই দিন দিন ল্যান্ডফোনের চাহিদা কমে যাচ্ছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটিরও বেশি।

এক দশকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ল্যান্ডফোন!

ল্যান্ডফোনের ব্যবহার দ্রুত কমে যাওয়ার তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেÑ বিটিসিএলের পিএসটিএন টেলিফোন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৪ সালে ৮ লাখ ৪৫ হাজার গ্রাহক ছিল। বর্তমানে ৪ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক আছে সারাদেশে। এই হিসাবে গেল ৯ বছরে গ্রাহক কমেছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার। গড়ে প্রতিবছর ৪৪ হাজার গ্রাহক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ল্যান্ডফোন থেকে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যে ল্যান্ডফোন একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এটা ঠিক যে, মোবাইল প্রযুক্তির প্রভাবে টিঅ্যান্ডটি ফোন ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছেÑ এর সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগসহ ‘জিপন’ সংযোগ দেওয়ার। এটি এখন চালু আছে। এর নেটওয়ার্ক এরিয়া বাড়ানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এই উপমহাদেশে ১৮৫৩ সালে ল্যান্ড ফোনের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠা হয় বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বিভাগ। ১৯৭৬ সালে এ বিভাগটিকে একটি করপোরেট সংস্থায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বিভাগকে পুনর্গঠন করে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি)। এর পর তারা দেশব্যাপী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান শুরু করে। ২০০৮ সালে বিটিটিবিকে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করে এর নতুন নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড, সংক্ষেপে বিটিসিএল।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram