কোভিড—১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে মানবজীবনে সৃষ্টি করেছে ভয়াবহ শঙ্কা। এখনো এটি নতুন নতুন ধরন নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। ফের শুরু হয়েছে করোনার নতুন ঢেউ। গত এক বছরে করোনার নতুন সংক্রমণ বেড়েছে ৫২ শতাংশ। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবি¬উএইচও) বলছে, গত ২৮ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে আট শতাংশ।
সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির জন্য করোনার নতুন ধরন জেএন ডট ১ কে দায়ী করেছে ডবি¬উএইচও। ওমিক্রন এবং জেএন ডট ১ ভ্যারিয়েন্টসহ বর্তমানে কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সাম্প্রতিককালে দেশে ঋতু পরিবর্তনের ফলে ফ্লু এবং নিউমোনিয়াসহ বেড়েছে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এর মধ্যে করোনা মহামারি পুনরায় বিস্তার পাওয়ায় ভীতি সঞ্চার করছে জনমনে। তবে আশার কথা, করোনার টিকা ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করার ফলে নতুনভাবে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনার যত ধরনে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তার মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ শতাংশের জন্য দায়ী জেএন ডট ১ উপধরন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) ভেদ করতে বেশি পারদর্শী বলে জানা গেছে। করোনার টিকা নতুন এই উপধরন প্রতিরোধে কতটা কার্যকর, সে বিষয়েও চলছে পরীক্ষা—নিরীক্ষা। গত বছর সংক্রমণের শীর্ষে ছিল ওমিক্রন। বর্ধিত সংক্রমণ হারের কারণে ভ্যারিয়েন্টটিকে এখন বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টটি বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। দেশে কোভিড—১৯ এ প্রথম মানুষ সংক্রমিত হয় ২০২০ সালের শুরুতে। জানুয়ারি ২০২১ সাল নাগাদ বিশ্বের ১৯১টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী ৩০ লাখের মতো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
দেশে এখন চলছে নানা প্রতিকূলতা। এরই মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে জেএন ডট ১। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারাও গেছেন। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬০ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৯৭ জন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সংস্থা সহায়তা করলেও যথাযথ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে প্রণীত হয়েছে জাতীয় কৌশলপত্র। এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা এবং জনসচেতনতা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস অদৃশ্য। এটি সম্পূর্ণ নির্মূূল করা কষ্টসাধ্য। তবে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নিঃসন্দেহে। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদা।
কিন্তু এসব মহামারির চিকিৎসা সেবা পেতেও রোগীরা প্রায়ই নানা রকম হয়রানির শিকার হন। রোগ নির্ণয়ে সরকার কর্তৃক ন্যূনতম ফি নির্ধারিত থাকলেও বিভিন্ন হাসপাতাল কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির দরুন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন যেখানে বিঘ্নিত, সেখানে যে কোনো অসুস্থতা তাদের জীবনকে করবে বিপন্ন। তাই সরকারকে সংক্রমিত রোগসমূহ কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চিকিৎসা সেবাকে সহজলভ্য করা সময়ের দাবি। সর্বাগ্রে মানুষের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাকে প্রাধান্য দেওয়া আবশ্যক।