সোমেল রানা, মেহেরপুর: মেহেরপুরে আদাচাষে স্বপ্নের জাল বুনছেন চাষিরা। বস্তায় গাছের নিচেয় এ চাষ নতুন দিনের সম্ভাবনা জাগিয়েছে। মাত্র এক মৌসুমে প্রতি বস্তায় ২২—২৫টাকা খরচে আড়াই থেকে ৩ কেজি আদা ফলাচ্ছেন চাষিরা। জেলার অন্তত ২০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ অন্যান্য ফসলের সাথে আদাচাষে উদ্বুদ্ধ করছে চাষিদের। আবাদি জমির পাশাপশি অনাবাদি, পতিত জমি, বসতবাড়ির অঙিনায় এমনকি আম বাগানে গাছের নিচেয় বস্তায় আদা চাষ করছেন তারা।
কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই জেলায়, মেহেরপুরের মাটিতে সব ধরনের ফসল ফলে। একই জমিতে বছরে চারটি পর্যন্তও ফসল ফলে। আদা পাহাড়ে চাষের ফসল হলেও মেহেরপুরে অনাবাদী জমিতে আদা চাষের উদ্যোগ নিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ। আদার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীর মাধ্যমে আম বাগানে গাছের নিচে বস্তায়ও আদা চাষ করে সফলতার ফলে জেলার অনেককেই এ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের শফিউদ্দিন মাস্টারের ছেলে বোরহান উদ্দিন ও রাজনগর গ্রামের রেজাউল হকের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তাদের নিজ নিজ আম বাগানের মাঝে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। বস্তায় আদা চাষে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তাদের দেখে এখন অনেকেই বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বস্তায় আদা চাষ ছড়িয়ে দিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আগামী বছর আদাচাষ মেহেরপুরের অর্থনীতিতে গতি আনবে বলে বিশ^াস করেন কৃষি কর্মকর্তারা।
চলতি বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী’ প্রকল্পের আওতায় আমঝুপি ইউনিয়নে আমবাগানে ৮শ বস্তায় আদাচাষ করেছেন আমঝুপি গ্রামের বোরহান হোসেন। তিনি জানান, প্রতি বস্তা আদা চাষে (ছাই—মাটি—জৈবসার—কোকডাস্ট পাউডার—বীজ) সব মিলিয়ে ২২—২৫ টাকা খরচ পড়েছে। ইতোমধ্যে বস্তা প্রতি দুইকেজি ফলন পেয়েছেন। আগামী জানুয়ারি মাসে আদা সংগ্রহকাল পর্যন্ত প্রতি বস্তায় ২ কেজি ৫’শ গ্রাম আদা উৎপাদন হবে বলে আশা করেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে আদা কিনতে অগ্রিম টাকা দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি এখন বিক্রি করতে চাই না।
আমঝুপি গ্রামের মিনারুল ইসলাম বলেন, বোরহান হোসেনের দেখে আমিও বাগানে আদা চাষ করব বলে ৫শ বস্তা প্রস্তুত করেছি। আগামী জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে আদা লাগানো হবে তাতে ।
সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের আদা চাষি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার বাড়ির উঠানে আমের গাছের জন্যে কোন গাছ লাগাতে পারতাম না। কৃষি অফিসের পরামের্শ বৈশাখ—জৈষ্ঠ্য মাসের দিকে ৭শ বস্তায় আধুনিক পদ্ধতিতে আদা রোপণ করি। এখন আদা তোলা যাবে। প্রতি বস্তায় দুই থেকে আড়াই কেজি আদা হবে। আরও কিছুদিন পরে তুলব যাতে ৩ কেজি আদা পাওয়া যায়। আদা চাষে বাড়তি কোন খরচ নেই। তেমন যত্নও নিতে হয়না।
উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলায় বাণিজ্যেক ভিত্তিতে ২০ হেক্টর জমিতে আদাচাষ হয়। আমঝুপি গ্রামে দুটি প্রদর্শনী প্লটে আদা চাষ করা হয়েছে। আদাচাষী বোরহান হোসেন ও জান্নাতুল ফেরদৌসকে দেখে অনেকই বস্তায় আদা চাষ করবেন বলে বস্তা প্রস্তুত করছেন। প্রতিটি পরিবার যদি দুটি বস্তায় আদা লাগায় তাহলে তার বছরের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এই কৃষি কর্মকর্তা আশা করছেন আগামী দুই বছর পর মেহেরপুরকে আর আদা আমদানী করতে হবেনা। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আদা জেলার চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে।