১৬ই জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জিডি করতে থানায় ভিড় করছেন ভুক্তভোগীরা
আজহারীর মাহফিলে শত শত ফোন-স্বর্ণালঙ্কার খোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে মোবাইল ফোন, স্বর্ণলংকার ও বিভিন্ন জিনিসপত্র হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ। তাদের অনেকেই শনিবার কোতোয়ালি থানায় ছুটেছেন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে। এদিন বিকেল পর্যন্ত তিন শতাধিক জিডি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা জিডির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
শুক্রবার রাতে শহরতলী পুলেটহাটস্থ আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় মাহফিলে গিয়ে মুসল্লিরা তাদের জিনিসপত্র হারিয়েছেন। এদিন মাহফিলের ভিড়ের মধ্যে পদদলিত ও ধাক্কাধাক্কিতে অন্তত ২১জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা যায়, যশোর শহরতলী পুলেরহাটস্থ আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন রাতে বক্তব্য রাখেন আন্তজার্তিক খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজাহারী। তার আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে সমগ্র মাহফিল এলাকা। শুক্রবার সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের ঢল নামে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে পুলেরহাটে। মাহফিল প্রাঙ্গণে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য রাখেন।

শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত স্বর্ণলংকার ও মোবাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩০০ জিডি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্যা মানুষ মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসে। তাৎক্ষণিক যারা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছে তারা জিডি করতে পেরেছে। আর আজ শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো ভিড় লেগেছে। কয়েক হাজার জিডির সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি ধারণা করছেন। মায়ের দেড় ভরি ওজনের একটি গলার হার খোয়া যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে জিডি করতে আসেন সদরের রুপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। এক পর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তার গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি।
বউয়ের গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলী নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হয়রত হোসেন। তিনি বলেন, এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ। লাখ লাখ মানুষের সমগম হয়েছে গতকাল। চোররাও এধরণের অনুষ্ঠানে সুযোগটা কাজে লাগায়। কর্তৃপক্ষের আরও সর্তক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিল। আমাদেরও সচেতন হওয়া উচিত ছিলো, ব্যাপক সমাগম স্থানে দামি দামি জিনিসপত্র পরিধান ও নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি।

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, যশোরের ইতিহাসে এমন বড় মাহফিল হয়নি। ওয়াজ মাহফিলে গেছিলাম ইমান আমল ঠিক করতে। আর চোরেরা তাদের ব্যবসা খুঁজে নিল। হাজার হাজার মানুষের মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দুরদুরান্ত থেকে এসেছে, তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছে না। যারা চুরির মতো এ ধরণের কাজ করছে মাহফিলে; তারা মাহফিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।

যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনদিন ব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ সমাগম হয়েছে। এর ভিতরে অসংখ্যা মানুষের মোবাইল, স্বর্ণলংকারসহ মুল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এদিকে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার পর মাহফিল শেষ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। তবে হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হওয়ার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, মাহফিলে আহত বা মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মাহফিলে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। ফলে মৃত্যু নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গত পহেলা জানুয়ারি বুধবার থেকে তিনদিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা। শেষ দিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী। #

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram