১৫ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সালমান শাহ
আজও রহস্যাবৃত সালমান শাহর মৃত্যু

সমাজের কথা ডেস্ক : চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ দেশের সিনেমাজগতের সুপারস্টার। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে পা রাখেন সালমান শাহ। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন বছরে উপহার দেন ২৭টি ব্যবসাসফল ছবি। তবে ধূমকেতুর মতো আসা এই মহানায়কের ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ মৃত্যুর খবরে হতবাক হয়ে যায় গোটা দেশের মানুষ।
আজ ৬ সেপ্টেম্বর সেই কালজয়ী নায়কের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু সেদিন তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল, ২৮ বছর পর আজও জানা গেলো না সেই রহস্য। মামলার তদন্তভার বারবার বদল হলেও, এখনও রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।

ঘটনার দিন রাজধানীর রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন সালমান শাহর বাবা প্রয়াত কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু মৃত্যুর এক বছর না যেতেই ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান আদালতে। এতে সালমান শাহর মৃত্যুরহস্যে নতুন মোড় নেয়।

ছেলে আত্মহত্যা করেছিল, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল, তা না জানার কষ্ট বুকে নিয়ে ছয় বছর পর ২০০২ সালে মারা যান বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

সালমান শাহর মৃত্যুর দুই যুগ পর এখনও তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও আবেদন রয়ে গেছে ভক্তকুলের কাছে। তার বাবার মতো ২৭ বছর ধরে তার ভক্তদের মনে আজও প্রশ্ন, সালমান সেদিন আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল? কয়েক দফা তদন্তে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও, এখনও মেনে নিতে পারেননি তার পরিবার ও ভক্তরা।
মামলার তদন্ত
মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়। কিন্তু সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী দায়রা আদালতে রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি দ্বিতীয় দফায় বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। প্রায় ১১ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পড়ে ছিল।

২০১৪ সালের ৩ আগস্ট তৎকালীন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

আবেদনে যাদের নাম
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে নারাজি দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, নজরুল শেখ সামিরা হক, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, আশরাফুল হক ডন, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ, আবুল হোসেন খান ও মনোয়ারা বেগম—এই ১১ জন সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। মামলাটি র‌্যাবকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।

এবার তাতে বাগড়া দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। মামলাটি র‌্যাবকে তদন্তভার দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন মহানগর পিপি। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন ঢাকার বিশেষ জজ-৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস (বর্তমানে বিচারপতি) রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‌্যাব মামলাটি তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। এরপর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পরিদর্শক সিরাজুল সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে মর্মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত পিবিআইয়ের দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। এরপর আবার সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে রিভিশনের আবেদন করা হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন। মামলাটি বর্তমানে রিভিশন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছরের ২ জানুয়ারি শুনানির জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আমরা এর বিরুদ্ধে নারাজি দেবো মর্মে আদালতকে অবহিত করি। কিন্তু সালমান শাহর মা দেশের বাইরে থাকায় নারাজি দাখিল করতে পারিনি। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। আমরা এর বিরুদ্ধে রিভিশন করেছি। বর্তমানে মামলাটি রিভিশন শুনানির পর্যায়ে আছে। আশা করি রিভিশন শুনানি হলে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

পরিবারের বক্তব্য
সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিচারের মালিক আল্লাহ। মাটিতে যারা থাকেন, তারা অমানুষ। তা না হলে সালমান শাহকে ঝুলন্ত অবস্থায় নামিয়ে গোসল করালো, নতুন কাপড় পরালো। সালমান শাহ অসুস্থ, তার মাকে ফোন দিয়ে পর্যন্ত জানালো না। এমনকি ঘটনার দিন বাড়িতে থাকা কোনও কাজের লোকজনও নেই। এর ভেতর তো রহস্য আছে।

ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, মামলাটি চলছে, চলবে। মামলাটির বিচার আল্লাহ ওপর ছেড়ে দিয়েছি। হয়তো এই পৃথিবীতে সালমান শাহ হত্যার বিচার হবে না কিন্তু আখিরাতে অবশ্যই হবে।

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না জানালে আলমগীর কুমকুম বলেন, নীলা চৌধুরী অসুস্থ। দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। লন্ডনে থাকাকালীন বাসে উঠতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছেন। তবে এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ।

কী ঘটেছিল সেদিন?
সিনেমায় সালমান শাহর জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি তখন মধ্যগগনে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় ভাড়া বাসায় পাওয়া যায় সালমান শাহর মরদেহ। স্ত্রী সামিরা হক পুলিশকে কল করে জানান, ড্রেসিংরুমের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে সালমানকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন তারা। সেখান থেকে তার দেহ নামিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

ওই দিনই রাজধানীর রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সালমানের বাসায় ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল ও স্ত্রী সামিরা বলেন, ‘সালমান রাত জেগে কাজ করেছেন। এখন তাকে ঘুম থেকে ডাকা যাবে না।’

প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে আসেন কমর উদ্দিন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেলিম নামের একজন তাকে ফোন করে জানান, সালমানের কী যেন হয়েছে। সালমানের বাবা, মা ও ভাই দ্রুত সালমানের বাসায় ছুটে গেলে শয়নকক্ষে সালমানের নিথর দেহ দেখতে পান তারা।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram